রহমাতুল্লাহ নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-
ভালো কাজের শর্তে মাদক মামলায় স্বল্প মেয়াদে সাজা পাওয়া আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এরইমধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রস্তাবনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। কয়েকদিনের মধ্যেই এ প্রস্তাবনা পাঠানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত মাসে (ডিসেম্বর ২০২২) সুরক্ষা সেবা বিভাগের একটি সমন্বয় সভায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা তার বক্তব্যে ভালো কাজের শর্তে স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। ওই কর্মকর্তা হচ্ছেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অপারেশনস) এম. আহসানুর রহমান। এই কর্মকর্তা তার আলোচনায় বলেন, ‘বরগুনা জেলা কারাগারে মাদক মামলায় স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের ভালো কাজের শর্তে আদালতের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই ভালো কাজগুলো হচ্ছে— বই পড়া, গাছ লাগানো ও পরিচর্যাসহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় কাজ করা। এটি সারা দেশের কারাগারগুলোতে চালু করা গেলে বন্দি ও কয়েদিদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে।’
এদিকে কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন আদালত ভালো কাজের শর্তে কিশোর ও তরুণসহ অনেক বন্দিকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে আসছে। গত ২ অক্টোবর (২০২২) যশোরের চৌগাছায় ভালো কাজের শর্তে দুই কিশোর শিহাব (১৭) ও তুষার (১৭) ইভটিজারকে মুক্তি দেওয়া হয়। রোভার স্কাউটস ও ব্লাড ডোনেট গ্রুপের সদস্য হয়ে ব্লাড ডোনেট এবং স্কাউটের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার শর্তে তাদের মুক্তি দেন বিচারক। গত ১৫ নভেম্বর ২৬ কিশোর-তরুণকে ভালো কাজের শর্তে মুক্তি দেন রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তারা কারাগারে আটক ছিল। তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তবে তাদের ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। আদালতের নির্দেশনা মেনে চললে তাদের মামলা থেকে খালাস দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে অসুস্থ মায়ের সেবা করার শর্তে মেহেদি আমিন খান বাবু নামের একজনকে প্রবেশনে মুক্তি দেন বরিশালের একটি আদালত। তিনি মাদকের একটি মামলায় ছয় বছরের সাজা পেয়েছিলেন। এছাড়া মহিউদ্দিন নামের আরেকজন কারাগারে ছিলেন গাঁজাসহ আটক হওয়ার অভিযোগে। তাকেও ভালো কাজের শর্তে মুক্তি দেন আদালত। এসব আসামিকে পর্যবেক্ষণে রাখেন স্থানীয় সমাজ সেবা কর্মকর্তারা। গত কয়েক মাসে বরিশালের আদালত থেকে বিভিন্ন মামলার স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত এমন দুই শতাধিক আসামিকে ভালো কাজের শর্তে মুক্তি দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৬৫ জন আদালতের শর্ত পূরণ করে ইতোমধ্যে পুরোপুরি মুক্ত রয়েছেন।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অপারেশনস্) মো. আহসানুর রহমান দৈনিক প্রতিদিনের বার্তাকে বলেন, ‘মাদক মামলায় যারা স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন, তাদের ভালো কাজের শর্তে মুক্তি দিতে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। পরে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক জানানো হবে।’ এসব কাজে দু’তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। বরগুনাসহ দেশের কয়েকটি কারাগার থেকে আদালতের মাধ্যমে এমন বন্দিদের ছাড়া হচ্ছে। তবে কী কারণে স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আদালত মুক্তি দিচ্ছে সেটা জানা নেই বলে জানান, বরগুনা জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আমজাদ হোসেন।