রহমাতুল্লাহ :- নিজস্ব প্রতিনিধি
বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের আবেগ ও ভালোবাসার স্থান, বিশ্ব ইজতেমার ময়দান। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা। জেঁকে বসেছে শীত। এর মধ্যেই টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ঢল নেমেছে তাবলীগ প্রেমী মুসল্লিদের। আজ বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিদের সংখ্যাও বাড়ছে। ভরে উঠছে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান।
গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানায় বিশ্ব ইজতেমার মাঠে কাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় মুসলমাদের মিলন মেলা। ইজতেমায় যোগ দিতে গত মঙ্গলবার থেকেই ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সকল শ্রেনী পেশার মুসল্লিরা। তবে আজ সকাল থেকে মুসল্লিদের ভিড় দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। ক্রমশই বেড়ে চলছে লোক সংখ্যা।
তাবলিগ জামাতের বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাওলানা জুবায়েরে আহমেদের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন কাল থেকে। তাঁদের ইজতেমা চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন জানুয়ারির ২০, ২১ ও ২২ তারিখ। সে হিসাবে এখন যাঁরা মাঠে আছেন বা আসছেন, সবাই জুবায়েরপন্থী ।
আজ সকাল থেকে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমায় যোগ দিতে মুসল্লিরা তুরাগতীরে আসছেন। কেউ বাসে, কেউ ট্রাকে, আবার কেউ পিকআপ ভ্যানে চড়ে এসেছেন ইজতেমা মাঠে। সবার হাতেই একাধিক ব্যাগ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। মুসল্লিরা মাঠে ঢুকছেন ভিন্ন ভিন্ন ফটক দিয়ে। মাঠে ঢুকেই নিজ নিজ খিত্তায় (নির্ধারিত জায়গা) অবস্থান নিচ্ছেন মুসল্লিরা।
সকাল নয়টার দিকে মাঠে গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিদের সঙ্গে। তাদের মাঝে আনন্দ উচ্ছাসের বাতাস বইছে এই মিলন মেলাকে ঘিরে। ‘অনেকদিন পর ইজতেমা হচ্ছে আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন। তারা সবাই খুব আনন্দিত। তাই আমরা সবাই আগেভাগেই চলে এসেছি। আর আগে না এলে নিজ নিজ জায়গা পেতে কষ্ট হয়।’
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় মুসল্লিরা বেশ উচ্ছ্বাসিত। ৩২ নম্বর খিত্তার আবুল হাসান বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে ইজতেমা করতে আসছি। এবার আবার সবার সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।’
তাবলীগ জামাতের বিভক্তি মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ মানুষেরা। তারা মনে করেন বিভক্তি হওয়ার কারণে এই দাওয়াতি মিশন অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীদের শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বি খন্দকার মেজবাহ উদ্দীন দৈনিক প্রতিদিনের বার্তাকে বলেন, এ বছর বিপুলসংখ্যক সাথী ইজতেমায় অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মঙ্গলবার থেকেই সাথীরা বাসে, ট্রাকে করে দলে দলে ছুটে আসছেন। সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর ইজতেমা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তায় কোনো রকম অবহেলা পাওয়া গেলে চাকরি থাকবে না।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে ইজতেমার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত ব্রিফিং প্যারেডে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। প্যারেডে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘দুই বছর পর আবার ইজতেমা হচ্ছে। এখানে লাখ লাখ মানুষ আসবে। আমাদের কাজ হলো যেকোনো মূল্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর মধ্যে কেউ যদি কোনো কারণে তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে বা নিয়মের ব্যত্যয় হয়, তবে আমি বলছি, তোমরা চাকরিটা হারাবা। একজন পুলিশ কমিশনার হিসেবে আবারও বলছি, তোমরা চাকরিটা হারাবা। তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিজ নিজ ইউনিটে ফেরত পাঠানো হবে।’
এখানে সারাদেশ থেকে পুলিশ সদস্যরা এসেছেন। সবার ফোন নম্বর আমাদের কাছে আছে। সবাইকে এমনভাবে মনিটর করা হবে যে কেউ টেরই পাবা না। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছে তথ্য চলে আসবে। এরপর যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হবে’, যোগ করেন কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
Leave a Reply