অনলাইন ডেস্ক:-
আখেরি মোনাজাতের পর গণপরিবহন সঙ্কটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইজতেমাফেরত ঘরমুখো মুসল্লিরা। আর এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাস না পেয়ে অনেকেই পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে রওনা দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন কেউ কেউ।
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ। দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে মোনাজাত শেষ হয়।
মোনাজাতের সময় সড়ক বন্ধ থাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাড়ি ফেরার জন্য মুসল্লিদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অনেক মুসল্লি ট্রেন, নৌপথ ও সড়কপথে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন।আব্দুল মান্নান নামে এক মুসল্লি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার শেরপুরের নকলা থেকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসি। তবে ইজতেমা ময়দানে জায়গা হয়নি। অনেক কষ্ট হলেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে পেরেছি। এ কারণে খুব ভালো লাগছে। এখন বাস না পেয়ে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।’
ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য গাজীপুরের মালেকের বাড়ি থেকে আলম এশিয়া পরিবহনে ওঠেন হুমায়ুন কবির। নির্ধারিত ভাড়া ১২০ টাকা হলেও দ্বিগুণ ভাড়া ২৫০ টাকা নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে ইজতেমায় আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’
আলম এশিয়া পরিবহনের চালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সারাদিনে এই একটি ট্রিপ চালাতে পারবো। ভাড়া বেশি না নিলে মালিকের কাছে জমা দিয়ে কিছুই থাকবে না। ঘরে চাল না নিয়ে গেলে বউ-পোলাপান খাবে কী? আমাদের (কন্ডাক্টর ও হেলপার) তো চলতে হবে।’
জয়দেবপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় কথা হয় টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকার যাত্রী সফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘চান্দনা থেকে নিয়মিত ভাড়া ৬০ টাকা। সেখানে পরিবহনের কর্মীরা ১২০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। দ্রুত বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাসে উঠতে হয়েছে।’কোনাবাড়ীগামী তাকওয়া পরিবহনে ২০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকার পোশাক কারখানার কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির এই অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করেছেন কালিয়াকৈরগামী অপর যাত্রী নাদির পারভেজ।
নৌপথ পথ বেছে নেওয়া মুসল্লি আলকাছ মিয়া বলেন, ‘হেঁটে যেতে পারবো না। আমার অনেক বয়স হয়েছে। তাই নৌকায় রওনা দিলাম। দেখি নৌকা দেিয় কতটুকু যেতে পারি। আশুলিয়ায় গিয়ে গাড়িতে উঠবো।’
ময়মনসিংহের ত্রিশালের বগার বাজার এলাকার মুসল্লি আবু সাঈদ অভিযোগ করেন, ‘সুযোগ বুঝে পিকআপ, থ্রি-হুইলার এবং লেগুনার চালকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। এগুলো উচিত না।’টঙ্গী রেলস্টেশণৈ কথা হয় গফরগাঁও উপজেলার পাইথর গ্রামের নসুমুদ্দির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে ভোরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য এসছিলাম। আসতে যেমন কষ্ট হয়েছে, এখন যাওয়ার সময় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। আয়োজক কমিটি অতিরিক্ত গাড়ি দিয়েছে। কিন্তু বিরতি না দিয়ে একসঙ্গে দুটি ট্রেন ছাড়লে একবারে যাত্রীরা আনন্দ নিয়ে বাড়ি যেতে পারতো।’
গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কথা হয় পিকআপ চালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একবার গেলে আর ফেরত আসতে পারবো না। ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগবে অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা। সেই হিসাবে ১৫০-২০০ টাকা খুব বেশি না।’
এদিকে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পিকআপ, থ্রি-হুইলার মহাসড়ক দখল করে নিয়েছে। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত জনপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই রুটের ভাড়া মাত্র ৫০ টাকা।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে ইজতেমাফেরত ঘরমুখো মুসল্লিদের কাছ থেকে যেন নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে এখনই পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।’
Leave a Reply