অনলাইন ডেস্ক:-
চট্টগ্রামে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলায় শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত-২ এ মামলাটি বিচারাধীন আছে। আগামী ২৩ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি জানান, মামলায় আগামী ধার্য তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা রয়েছে। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষের ১৪ জন সাক্ষী রয়েছে। মামলার এজাহারে ছয় জন আসামি ছিল। পুলিশ তদন্ত শেষে পাঁচ জনের নামে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে প্যাটেল নামে আমেরিকান প্রবাসী এক ভারতীয় নাগরিকের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে চার্জশিট থেকে পুলিশ বাদ দিয়েছে। বাকি পাঁচ আসামির মধ্যে নিহতের স্ত্রী মিতুর (তানজিলা হক চৌধুরী মিতু) কথিত বন্ধু মাহবুব গত সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণের পর বর্তমানে কারাগারে আছেন। মিতু উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক আছেন। বাকি তিন আসামিও মামলার পর থেকে পলাতক। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সব আসামি এখন আমেরিকায় আছেন। তারা আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় নিজের শরীরে নিজেই ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেন চিকিৎসক আকাশ। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ তোলেন। এর প্রমাণ হিসেবে মিতুর সঙ্গে তার বন্ধুদের বেশ কিছু ছবিও তিনি আপলোড করেন।
ঘটনার দিন রাতেই নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মিতুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১ ফেব্রুয়ারি ডা. আকাশের মা জোবেদা খানম বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে ছয় জনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় মিতুকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- চিকিৎসক আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার (মিতুর) মা শামীমা শেলী, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, ছোট বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা ও মিতুর কথিত বন্ধু ডা. মাহবুবুল আলম। এ ছাড়া প্যাটেল নামে এজাহারে এক ভারতীয় নাগরিককে আসামি করা হলেও পুলিশ তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছে।
নিহত ডা. আকাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বেদনবিদ (অ্যানেস্থেসিয়া) বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। থাকতেন নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাত বছরের প্রেমের সূত্র ধরে ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর সঙ্গে আকাশের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মিতু বেশি সময় কাটিয়েছেন মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায়। মাঝে-মধ্যে স্বামীর কাছে আসতেন। দেশে আসার পরও স্বামীর বাসায় নয়, বেশিরভাগ সময় থাকতেন তার বাবার চান্দগাঁও এলাকার বাসায়। তিনিও পেশায় চিকিৎসক। ২০১৪ সালে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
আত্মহত্যার আগে আকাশ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্ত্রী তানজিলা হক মিতুকে দায়ী করেন। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট (প্রতারণা) করো না, বিশ্বাস ভাঙ্গিওনা, মিথ্যা বলো না। আমার ভালোবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমাদের দেশে তো ভালোবাসায় চিটিংয়ের শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম। আর আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ।’
সর্বশেষ স্ট্যাটাসে আকাশ লেখেন, ‘ভালো থেকো, আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে।’ এ ছাড়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে আকাশ বিয়ের আগে ও পরে একাধিক ছেলে বন্ধুর সঙ্গে মিতুর অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেন। তিনি ফেসবুকে স্ত্রীর কয়েকটি আপত্তিকর ছবিও পোস্ট করেন।
Leave a Reply