অনলাইন ডেস্ক:-
গাজীপুরে পুলিশি নির্যাতনে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যুর বুধবার (১৮ জানুয়ারি) পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর, সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও পুলিশকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে মহানগরের বাসন থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দুটি করা হয়।
বাসন থানার ওসি মালেক খসরু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মামলার নথি এখনও না দেখায় আসামির সংখ্যা জানাতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। সূত্রে জানা গেছে, রবিউল নিহতের পর বিক্ষোভ করা স্বজন ও এলাকাবাসীকে আসামি করা হয়েছে।
রবিউল ইসলাম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শাহাদাতপুর (পোস্ট গুজিপাড়া) গ্রামের বাকি মন্ডলের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন পেয়ারাবাগান এলাকায় বসবাস করে ব্যবসা করতেন। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, তাকে থানায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
এর আগে, গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে জুয়া খেলার অভিযোগে ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। একই রাতে রবিউলকেও থানায় নেয় পুলিশ। দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ দেলোয়ারকে আবার দোকানের সামনে নামিয়ে দেয়। তিনি বাসন থানাধীন পেয়ারাবাগান এলাকার একজন ভাড়াটিয়া। জামালপুর জেলা সদরের হামিদপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে।
দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রবিউলকে ওই রাতেই ধরে নিয়েছিলেন বলে শুনেছেন তিনি। তবে সেটি পরদিন সকালে তিনি জানতে পারেন। তাকেও শনিবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে জুয়া খেলার অভিযোগে তার দোকান থেকে বাসন থানা পুলিশ গাড়িতে করে নিয়ে যায়। তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। থানার সামনে নিয়ে গাড়িতেই দেড় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। ওই রাতে অন্য কাউকে থানায় ধরে আনা হয়েছিল কি না তা তিনি দেখেননি।
তিনি আরও দাবি করেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেড় ঘণ্টা পর পুলিশের গাড়িতে করে তার দোকানের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় কোন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে গেছেন তাদেরকে তিনি চেনেন না। কিন্তু যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন তারাই তাকে গাড়ী নামিয়ে দেন। বাসন থানা পুলিশের সোর্স মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের হয়রানি করেছে। পেয়ারাবাগান এলাকায় তিনি মুদি দোকান করেন।
দেলোয়ারের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার দাবি করেন, ‘স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় গিয়েছিলাম। আমরা হয়রানি হতে চাই না। স্বামীর ছোট একটা ব্যবসার মাধ্যমে দুটি সন্তান লালন-পালন করি।’
অপরদিকে, বাসন থানার আশপাশের এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ গত সাত দিনে বাসন থানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে কোনও দুর্ঘটনার খবর পাননি। তাদের কেউ বিভিন্ন পরিবহনের চালক, চা স্টলের দোকানি, গ্যারেজের মিস্ত্রি, ভ্যানচালকসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। তারা বলেন, এলাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে রবিউলের মৃত্যুর বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের পুলিশ জানিয়েছে, রবিউল বাসন থানার কাছেই ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় আহত হয়ে মারা গেছেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বাসন থানার ওসি মালেক খসরু জানান, বিট কয়েনের মাধ্যমে জুয়া খেলার অভিযোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রবিউলসহ চার জনকে আটক করে থানায় আনা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল, তারা প্রায়ই এলাকায় আসর বসিয়ে জুয়া খেলার আয়োজন করে। পরে যাচাই-বাছাই করে তিন জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রবিউলের স্বজনদের কাছে খবর পাঠানো হয় তাকে নিয়ে যেতে। রবিউলের লোকজন মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তাকে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় বাসন থানার কাছাকাছি ভোগড়া বাইপাস এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় তিনি আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
গাজীপুরের পেয়ারাবাগান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিহত রবিউলের পরিবার ছাড়া বাকি ভাড়াটিয়ারা বাড়িতে অবস্থান করছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এলাকায় এসে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলছেন।
এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দুর্ঘটনা উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ জানার জন্য ময়নাতদন্তের প্রয়োজনের কথাটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান শাহনাজ গলির রবিউল ইসলাম নিহতের পর বুধবার সকাল ১০টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী।
Leave a Reply