অনলাইন ডেস্ক:-
শেষ বলে ফরচুন বরিশালের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ রান। তখন রেজাউর রহমান রাজাকে কিছু একটা পরামর্শ দিতে থাকেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে রেজাউর শেষ বলটি ছুড়লেন লেগ স্ট্যাম্পে। বলটি ফাইন লেগ দিয়ে মোহাম্মদ ওয়াসিম চারও মারেন। কিন্তু জয়ের জন্য সেটি যথেষ্ট না হওয়ায় ওই প্রান্তে ফিল্ডিং করতে থাকা মোহাম্মদ আমির বলটি ধরারও চেষ্টা করলেন না। তাতে শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচে ২ রানে ম্যাচ জিতেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে এই সিলেটের কাছে হার দিয়েই বিপিএল শুরু করেছিল ফরচুন বরিশাল। এরপর টানা ৫ ম্যাচে দাপট দেখালেও পুনরায় সিলেটের কাছেই ধরাশায়ী হয়েছে।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে ১৭৩ রান করে সিলেট। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ জবাবও দিতে থাকে বরিশাল। যদিও ম্যাচটা রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে পুরোটা সময়। একবার সিলেটের দিকে ম্যাচ হেলে পড়ে তো আরেকবার বরিশালের দিকে। শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন পড়ে ৬ বলে ১৫ রান। কিন্তু তারা সহজ এই লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি রেজাউর রহমানের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইফতেখার আহমেদকে ফেরানোর পরই সিলেটের জয় নিশ্চিত হয়েছে।
তবে সিলেটের জন্য ম্যাচট কঠিন হতো না। পুরো ম্যাচে অন্তত চারটি সহজ ক্যাচ মিস করেছেন ফিল্ডাররা। প্রথম ওভারেই মাশরাফির বলে ইব্রাহিম জাদরান ফিরে যেতে পারতেন। কিন্তু ১ রান করা ইব্রাহিমকে জীবন দেন ফিল্ডার জাকির হাসান। জীবন পেয়ে ৩৭ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। সাইফ হাসানও একবার জীবন পেয়ে খেলেছেন ১৯ বলে ৩১ রানের ইনিংস। সহজ সুযোগ হাতছাড়া করাতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় সিলেট। তবে বরিশালের সাইফ, ইব্রাহিম, এনামুলের পর সাকিবকে ফিরিয়েই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দিতে অবদান রাখেন রেজাউর। ১৮ বলে ২৯ রানে বোল্ড হয়েছেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব।
এরপর ইফতেখার আহমেদ ও করিম জানাত মিলে বরিশালকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। আমিরকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে জানাত ফেরেন ২১ রানে। ক্রিজে ইফতেখার থাকায় তখনো বরিশালের হাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহ (৭) ফিরে গেলেও জয়ের দ্বারপ্রান্তেই ছিল বরিশাল। পঞ্চম বলে মিরাজ ছক্কা মারলে ৭ বলে দরকার পড়ে ১৫ রান। কিন্তু রেজাউরের পর পর দুই বলে ইফতেখার (১৭) ও মিরাজ (৭) বিদায় নিলে ম্যাচ পুরোপুরি হেলে পড়ে সিলেটের দিকে। শেষ চার বলে এক ছয় ও এক চার নিতে পারে বরিশাল।
সিলেটের বোলারদের মধ্যে রেজাউর রহমান রাজা ৪১ রান খরচ করে চার উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া বিপিএলে অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব ও মোহাম্মদ আমির দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের শুরুটা ছিল ভুতুরে। দলীয় ১৫ রানেই বিদায় নেন জাকির হাসান (০), তৌহিদ হৃদয় (৪) ও মুশফিকুর রহিম (০)। প্রথম চার ম্যাচে সিলেটের তিন জয়ের নায়ক হৃদয় ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেও ভালো করতে পারেননি। তিন ব্যাটারকে হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও বিপিএলে অভিষিক্ত ইলিংশ ক্রিকেটার টম মুরস মিলে ৭১ বলে ৮১ রানের জুটি গড়েন। ৩০ বলে ৪০ রান করে আউট হন মুরস। এরপর থিসারা পেরেরা ও শান্ত মিলে ঝড় তুলেছেন। থিসার পেরেরা ১৬ বলে ২১ রান করে আউট হন। শান্ত ৬৬ বল খেলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় খেলেছেন ৮৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। অপরাজিতও থাকেন তিনি। শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে মুরস ও শান্তর ব্যাটের ওপর দাঁড়িয়েই সিলেট ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান সংগ্রহ করে।
৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বরিশালের সেরা বোলার মোহাম্মদ ওয়াসিম। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও কামরুল ইসলাম রাব্বি একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
৭ ম্যাচের ছয়টিতে জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে সিলেট স্ট্রাইকার্স। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ৫টি জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে সাকিবের ফরচুন বরিশাল। টেবিলের তিন নম্বর দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ৭ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে তারা।
Leave a Reply