অনলাইন ডেস্ক:-
সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়— এমন প্রচলিত আইন পরিবর্তনে সবার উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সেতুবন্ধন আরও সুদৃঢ় হওয়া দরকার। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বা সেরিমনিয়াল প্রতিষ্ঠান নয়, যেকোনও প্রকারের দীর্ঘসূত্রতা অতিক্রম করে কমিশন মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে চায়।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমানুষের প্রত্যাশা: গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সমন্বিত প্রয়াস’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে এসব কথা বলেন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একসঙ্গে কাজ করলে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবো। তাছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারেও কমিশন সচেতন। সরকারের পক্ষ থেকে এই আইন সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এর জন্য অপেক্ষা করছি। প্রয়োজনে আমরা এ বিষয়ে কথা বলবো।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ, কলামিস্ট ও পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, কমিশনের অবৈতনিক সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, আমিনুল ইসলাম, কংজরী চৌধুরী, ড. তানিয়া হক, কমিশনের সচিব নারায়ণ চন্দ্র সরকারসহ অন্য কর্মকর্তারা। বিশিষ্ট সাংবাদিকদের মধ্যে মতামত প্রদান করেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাসসের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন, দৈনিক প্রথম আলোর সোহরাব হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, এবি নিউজ ২৪ ডটকমের প্রধান সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়, রাইজিং বিডির প্রধান সম্পাদক এস এম জাহিদ হাসানমহ আরও অনেকে। বক্তারা বর্তমান কমিশনকে সংবাদকর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘ব্যক্তি, পরিবার, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। বাংলাদেশে মূল্যবোধের অবক্ষয়, নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই, এই দৌড়ে কাকে মারলাম, কাকে অবজ্ঞা করলাম তা দেখি না। বর্তমানে সমাজে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। যা তরুণ সমাজকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন বেশি হয়। তৃণমূল পর্যায়ে নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে। এই নির্যাতন বন্ধে কমিশন কাজ করতে পারে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি কমিশনকে প্রত্যেকটা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করার এবং মানবাধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি মিজ ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন কেন ৯৫ বারেও দেওয়া হলো না, এর ব্যাখ্যা প্রয়োজন। পাশাপাশি, কোনও সাংবাদিকও এটার কোনও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারেনি, যা দুর্ভাগ্যজনক।’ মানবাধিকার কমিশন সব চাপের ঊর্ধ্বে থেকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। পাশাপাশি, মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যম কমিশনের পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর যেমন কমিশন গণমাধ্যম থেকে পেয়ে থাকে, তেমনই মানবাধিকার লঙ্ঘনে কমিশনের গৃহীত পদক্ষেপ গণমাধ্যম প্রকাশ করে সমাজে বার্তা প্রদান করে থাকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এধরনের অনেক ঘটনা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমলে নিয়েছে এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করেছে।’
Leave a Reply