ডেস্ক রিপোর্ট:-
নিজের সন্তান পরিচয়ে দুই শিশুকে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে দুই নারীসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় ভুক্তভোগী দুই কিশোর-কিশোরীকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কিশোরটির বয়স ১৬ ও কিশোরীর ১৩ বছর। বলা হচ্ছে, পাচারের শিকার দু’জনই মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গা শিশু। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিঞা।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের আটক করে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে ডিএমপি বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তারা গতকাল মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তারা মালয়েশিয়ার যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে তাদের আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। আটকদের থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ-খবর নিয়ে ওই শিশুদের দুটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তবে তাদের পরিচয় নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে, এখনই তাদের রোহিঙ্গা বলা ঠিক হবে না।’
গ্রেফতাররা হলেন- মা পরিচয় দেওয়া শাহীন আক্তার (৫৫), তার মেয়ে তাসনুভা জেরিন (৩০) ও মেয়ের বন্ধু মোহাম্মাদ তুষার (২১)। তাদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় একটি মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় লালু মিয়া নামে একজনকে পলাতক আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গাজীপুর কাপাসিয়া থানার তেতুলিয়া এলাকার ফিরোজ হোসেনের স্ত্রী শাহীন আক্তার ও তাদের মেয়ে তাসনুভা জেরিন। তবে তাদের পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানা রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান আবাসিক এলাকা। মেয়ের বন্ধু পরিচয় দেওয়া মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগরের বালাসুর এলাকার শামীম সিদ্দিকের ছেলে মোহাম্মদ তুষার। এছাড়াও মামলাটিতে পলাতক আসামি লালু মিয়া হাকিম আলীর ছেলে।
এতে আরও অভিযোগ করা হয়, দুই কিশোর-কিশোরীরই নিজের প্রকৃত নাম বদলে গ্রেফতার শাহীন আক্তার ও ফিরোজ হোসেনের সন্তান হিসেবে তুষার হোসেন ও তানিশা হোসাইন নামে পাসপোর্ট বহন করছিল।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, আটককৃতরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তারা মালয়েশিয়ায় তাদের কথিত মামা পলাতক ৪নং দালাল আসামি লালু মিয়ার কাছে নিয়ে যাওয়া ও আসার খরচসহ তাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরির জন্য পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে চুক্তি করে। সেই মোতাবেক আসামিরা পরিকল্পিতভাবে অজ্ঞাতনামা পলাতক দালালের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগীদের ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করেন। পলাতক দালাল ও আসামিরা পরস্পর সহযোগিতায় অবৈধ লাভের আশায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া মানবপাচারের চেষ্টা করছিলেন। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহের সহযোগিতা করে অপরাধ করেছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিঞা বলেন, টেকনাফের দুই কিশোর-কিশোরীকে নিজের সন্তান পরিচয়ে পাচার করতে যাচ্ছিলেন শাহীন আক্তার নামে ওই নারী। কিন্তু ভুক্তভোগীরা রোহিঙ্গা কিনা এখনও বলা যাচ্ছে না। রাতে ভুক্তভোগীদের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই পাঠানো হচ্ছে, কালকে তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে। যদি রোহিঙ্গা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের ক্যাম্পে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর না হলে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
পাচারের উদ্দেশ্য কী ছিল জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তারা স্বীকার করেছে- তাদের মালয়েশিয়া তাদের কথিত মামা লালুর কাছে পৌঁছে দিতে পাড়লে তিন জনের যাওয়া-আসার খরচ ফ্রি ছিল। তারা ভেবেছিলেন, এভাবে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার পর একসময় ভালো কোনও দেশে যেতে পারবেন। কিন্তু অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা, সেটা জানার চেষ্টা চলছে। এছাড়া মামা পরিচয় দেওয়া লালুকেও খোঁজা হচ্ছে। তাকে পেলে মূল বিষয়টা জানা যাবে। তবে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়নি।