অনলাইন ডেস্ক:-
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহী যাবেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রীকে সাদরে বরণ করতে প্রস্তুত রাজশাহী। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে একমাস ধরে নানা প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) মাঠের সাজসজ্জা, মঞ্চ তৈরি।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে রাজশাহী সাজানো হয়েছে বর্ণিল রূপে। সবখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন। অবশ্য এসব ব্যানারে সরকারের উন্নয়ন চিত্র বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা।
জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টানা একমাস ধরে রাজশাহী নগরী ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা-উপজেলা, গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতারা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন জনসভা সফলের লক্ষ্যে। জাতীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজশাহীতে এবারের জনসভা হবে সর্বকালের মহাজনসমুদ্র। এই সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে পুরো রাজশাহী। র্যাব, পুলিশ, সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুরো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নগরীজুড়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাঠে জনসাধারণের চলাচলও এখন সীমাবদ্ধ।

ঐতিহাসিক মাদ্রাসা (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) মাঠে জনসভা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে
সমাবেশস্থল ও নগরী ঘুরে দেখা যায়, সাদা পোশাকে পুলিশি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। মাদ্রাসামাঠে মঞ্চ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। মাঠে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পুলিশি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাদ্রাসা মাঠ। জনসাধারণের মাঠে প্রবেশেও এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আশেপাশের এলাকাগুলোতেও পুলিশি নজরদারি এবং টহল বাড়ানো হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পুলিশি পাহারা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সমাবেশস্থলের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে এরইমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে পুলিশ। ঢাকা হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আগে থেকে সোচ্চার রয়েছে পুলিশ।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা এসএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করেই মাঠে কাজ শুরু করেছেন। ২৭ জানুয়ারি থেকেই মাঠে ফায়ার সার্ভিস সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যেসব ভেন্যুতে যাবেন, সেখানেও তাদের ব্যবস্থা থাকবে। সমাবেশকে সামনে রেখে তাদের প্রায় ৮৫-৯০ জনের টিম প্রস্তুত রয়েছে।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল জানান, সমাবেশকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের মতো দায়িত্ব পালন করবে। তবে তাদের পক্ষ থেকে ৫০০ স্বেচ্ছাসেবী সেবা দেবেন। সমাবেশে সবার জন্য পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে সমাবেশস্থলসহ নগরী এবং যে রুটে প্রধানমন্ত্রী আসবেন সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। এ ছাড়া সামাবেশের দিন মাঠে ১০ পেট্রোল র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া তিনটি রিজার্ভ পেট্রোল থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর অপ্রীতিকর কোনও কিছুর শঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই। আর এ বিষয়ে র্যাব তৎপর রয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার রাজশাহীতে দিনব্যাপী সফরে প্রায় এক হাজার ৩শ’ ১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আনুমানিক ৩শ’ ৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
সরকারি সূত্র জানায়, বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো হলো: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রায় ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর সিঅ্যান্ডবি ক্রসিংয়ে ম্যুরালটি নির্মাণ করেছে।
এ ছাড়া সিটি করপোরেশন আরও যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সেগুলো হচ্ছে: শেখ রাসেল শিশু পার্ক, মোহনপুর রেল ক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার, চার লেনের সড়ক এবং ভাদ্রা রেল ক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ধীরগতির যানবাহনের জন্য একটি পৃথক লেনসহ রোড ডিভাইডার, চার লেনের সড়ক এবং রোড ডিভাইডার। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে সিটির হাট পর্যন্ত ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন এবং সড়ক প্রশস্তকরণ, কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী ক্রসিং এবং কার্পেটিং সড়কের উন্নয়ন, হাই-টেক পার্ক হয়ে রেন্টুর খারির আড়ত থেকে ধলুর মোড় পর্যন্ত নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কার্পেটিং। কোর্ট থেকে শাহারতলী ক্লাব পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ।
রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি ক্রসিং সংলগ্ন স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। আরসিসি ‘রাজশাহী সিটিতে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক’ ২ হাজার ৯শ’ ৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রায় ৫ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের বৃহত্তম ম্যুরাল নির্মাণ করেছে। ম্যুরালটির উচ্চতা ৫৮ ফুট এবং ম্যুরালের মূল অংশে ৫০ ফুট উচ্চতা এবং ৪০ ফুট চওড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে।
ম্যুরালের সীমানা প্রাচীরের উভয় পাশে ৭শ’ ফুট জায়গায় টেরাকোটার কাজ করা হয়েছিল। গ্যালারি এবং ল্যান্ডস্কেপিং সুপার গ্রানাইট দিয়ে সুসজ্জিত। ম্যুরালে নাইট ভিশনসহ সুসজ্জিত বৈদ্যুতিক বাতি রয়েছে।
রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ম্যুরালটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন, কর্ম, দেশের স্বাধীনতায় প্রশংসনীয় অবদান এবং ত্যাগ সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করে।’
শিশুদের বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে রাজশাহী নগরীতে শেখ রাসেল শিশু পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আরসিসির উদ্যোগে ছোট বনগ্রাম এলাকায় ২.১৪ একর জমির ওপর পার্কটি নির্মাণ করা হয়, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় ১১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পুঠিয়া থেকে বাগমারা পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণ করেছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে। প্রায় ২০ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দফতর ভবন নির্মাণ করেছে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্রায় ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মোহনপুর উপজেলায় ২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ২২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় রাজশাহী শিশু হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহীতে একটি বহুতল সমাজসেবা ভবন নির্মিত হয়েছে। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয় তলার ওপর দুই তলা বিশিষ্ট মহিলা হোস্টেল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চারঘাট উপজেলায় ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী সিভিল সার্জনের অফিস নির্মাণ করা হয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁ-তীর রক্ষায় ৬৯৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি সড়ক নির্মাণ করছে। রাজশাহী পিটিআইতে প্রায় ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।
অন্যদিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রকল্পগুলো হচ্ছে: ২৪ কোটি টাকায় তথ্য কমপ্লেক্স ভবন, ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আঞ্চলিক জন প্রশাসন অফিস ভবন, ৬২ কোটি টাকায় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়। ১৬২ কোটি টাকায় বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ করা
Leave a Reply