অনলাইন ডেস্ক:-
সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরটি ছিল তুরস্ক-সিরিয়ার জনগণের জন্য বিভীষিকাময়। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প তাদের স্বাভাবিক জীবনকে করে দিয়েছে লন্ডভন্ড। ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দুই দেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১ জনে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই দুর্যোগে পুরো বিশ্বই এখন হতবিহ্বল। বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী লিমিটেডে খেলছেন সিরিয়ার ইউসেফ মোহাম্মদ। ভূমিকম্পের ঘটনায় স্বদেশের জন্য কাঁদছে ২৩ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের মন।
মৃত্যুর মিছিল দেখে ইউসেফ ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। তবে একদিক দিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছেন তিনি। ভূমিকম্পে তার পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কেউ আক্রান্ত হননি।
ভূমিকম্পে সিরিয়া থেকে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে তুরস্কে। তবে সিরিয়ার যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, সেটা ইউসেফদের জন্মস্থান নয়। এমনকি কেউ সেখানে থাকেও না। ইউসেফদের বাড়ি উত্তরাঞ্চলের শহর আল আসাকায়।
নিজের শহর কিংবা পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হলেও ইউসেফ নিজের ও তুরস্কের জনগণের কথা চিন্তা করে ভীষণ ব্যথিত। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমরা যে অঞ্চলে থাকি সেখানে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সবাই বেশ ভয় পেয়েছেন। যেখানে আঘাত হেনেছে সেখানে এখন খারাপ অবস্থা। যদিও আমার পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনের কেউ সেখানে থাকেন না। সিরিয়ার পাশাপাশি তুরস্কে এই ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য সমবেদনা।’
এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও ঢাকায় বসে আবাহনী লিমিটেডের পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাকে। বিষণ্ন মন নিয়ে বলছিলেন, ‘আশা করছি দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সবার জন্য দোয়া করতে পারি, যেন সবাই সুস্থ হয়ে ওঠে, ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে। আসলে আমার মনটা বেশ খারাপ।’
২৩ বছর বয়সী ইউসেফের জন্ম আল হাসাকায় হলেও এখন খেলার সূত্রে থাকা হয় দামেস্কে। তারা সাত ভাই ছয় বোন। সিরিয়ার জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন ২০১৯ সাল থেকে। কিন্তু ফিফা স্বীকৃত ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে মাত্র ১০টি। এমনিতে সিরিয়ার দুঃখের শেষ নেই। গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত। তার ওপর যুদ্ধের কারণে নিজেদের দেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচও হয় না। সিরিয়াকে নিজেদের হোম ম্যাচ খেলতে হচ্ছে দুবাই, কাতার কিংবা জর্ডানে। তাই ইউসেফের দুঃখের শেষ নেই, ‘যুদ্ধের কারণে নিজেদের মাঠে খেলা হয় না। এটা আমাদের জন্য কষ্টকর। এটা প্রত্যাশিতও নয়। তবে দেশের সব জায়গায় এখন ঘরোয়া ফুটবল চলছে। আর বন্ধ নেই।’
সিরিয়া-বাহরাইনের ক্লাবের পর বাংলাদেশে আবাহনীর হয়ে রক্ষণ সামলাচ্ছেন ইউসেফ। তার প্রত্যাশা, একটা সময় এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবে সিরিয়া। পাশাপাশি গৃহযুদ্ধের অভিশাপ থেকেও নিজেদের মুক্ত করবে।
Leave a Reply