অনলাইন ডেস্ক:-
সড়ক দুর্ঘটনার নামে চালিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল নরসিংদীর ডিস ব্যবসায়ী শাহান শাহ আলম বিপ্লব (৩৪) ও তার সহযোগী মো. মনির হোসেন (৩৪)কে। পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর মহাপরিচালক বনজ কুমার মজুমদার।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই’র প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে নরসিংদী জেলা পিবিআই এরইমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো— মোহাম্মদ মামুন মিয়া, সোহাগ মিযয়া ও মাসুদ মিয়া। তারা এরইমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে এবং এটি যে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা আদালতকে তাও জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির বিষয়বস্তু সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও ২/১টি বিষয়ে আলাদা ও নতুন তথ্য দেওয়ায় তা যাচাই করা হচ্ছে। আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, বিদেশ থেকে ওমর ফারুক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই হত্যা ঘটানোর জন্য টাকা পাঠায়। ওমর ফারুক ঘটনার আগে থেকেই দেশের বাইরে থাকায় তার সংশ্লিষ্টতা ও অর্থ লেনদেনের বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আসামিদের দেওয়ার তথ্য ও তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে আরও ১০ জনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পিবিআইপ্রধান জানান, তদন্তকালে জানা যায় যে, বিপ্লবের বিরুদ্ধে ৪টি হত্যাসহ ১০টি মামলা ও ১১টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। কিন্তু বিপ্লব বরাবর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তার ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে চাইতো না।
পিবিআই মামলা তদন্তের শুরুতেই ভিকটিম শাহান শাহ আলম বিপ্লবের সম্ভাব্য শত্রুপক্ষের বিষয়ে যাচাই করা হয়। বিপ্লবের একসময়ের ডিস ব্যবসার পার্টনার আসামি মামুন মিয়া, যিনি বিপ্লবের ডিস ব্যবসার টাকা আত্মসাৎ করায় বিপ্লব তাকে ব্যবসা থেকে বের করে দেয়। ফলে তাদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে আসামিদের উপস্থিতি তদন্তকারীদের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়। এছাড়া নিহতরা দুর্ঘটনার শিকার নয় বরং পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি ধরে তদন্ত চলমান থাকে।
বিপ্লবকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তৃতীয়মি দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই জোড়া খুনের ঘটনায় আসামিদের মূল টার্গেট ছিল শাহান শাহ আলম ওরফে বিপ্লব। তাকে হত্যার উদ্দেশে ঘটনার ১৫/২০ দিন আগে আসামি মামুন মিয়ার নেতৃত্বে লোচনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় বসে পরিকল্পনা করা হয়।
আসামিদের মতে, বিপ্লব খুব বাড়বাড়ছে, সে সবার জন্য হুমকির কারণ। তাই তাকে মেরে ফেলতে হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করায়, তার জানাজায় বিপ্লব অংশগ্রহণ করতে পারে, এ ধারণা থেকে আসামিরা লোচনপুরের একটি এলাকায় হত্যার প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান নেয়। কিন্তু বিপ্লব জানাজায় না যাওয়ায় সেদিন আসামিরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এর কয়েকদিন পরে বিপ্লব বাড়িতে আসলে পথে তাকে আঘাত করা হবে পরিকল্পনা করে অবস্থান নেয় আসামিরা। কিন্তু ওইদিন বিপ্লবের সঙ্গে ৪টি মোটরসাইকেলে ৬/৭ জন লোক থাকায় আসামিরা তাকে আক্রমণ না করে ফিরে যায়।
সর্বশেষ ঘটনার দিনে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট আসামিরা প্রথমে লোচনপুর থেকে পরিকল্পনা করে বিপ্লবকে হত্যার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ নরসিংদী রওনা করে। পথে বারৈচা হতে কালো মাইক্রোবাসটি সংগ্রহ করে। তথ্য সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে করে সোহাগ ও ফয়সাল নরসিংদীতে আসে। অন্যান্য আসামি মাইক্রোবাসযোগে নরসিংদী শহরের ভেলানগর জেলখানা এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। আসামি সোহাগ ও ফয়সাল ভিকটিম বিপ্লবের সার্বক্ষণিক মুভমেন্ট ফলো করে অন্যদের জানাতে থাকে। বিপ্লব ও মনির মোটরসাইকেলযোগে হাইওয়েতে উঠলে সোহাগ তাৎক্ষণিক তথ্য জানিয়ে দিলে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্য আসামিরা ভিকটিমদের অনুসরণ করতে থাকে। প্রথমে একবার পেছন থেকে আঘাত করে ব্যর্থ হয়ে সামনে গিয়ে আবারও অবস্থান করে এবং ভিকটিমরা মোটরসাইকেল নিয়ে মামলার ঘটনার স্থলে পৌঁছামাত্র কালো মাইক্রোবাসটি পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে বিপ্লব ও মনির নিহত হন।
Leave a Reply