অনলাইন ডেস্ক:-
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। শুধু শিমলাপাড়া নয় বনের বিভিন্ন স্থানে শীতের শেষে রহস্যময় আগুন দেখা যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় বন কর্মীদের কোনো আগ্রহ না থাকায়, হুমকিতে পড়েছে বনের ছোট-বড় উদ্ভিদসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও প্রাণী।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনে আগুন লেগেছিল। আগুন লাগার জায়গা থেকে শিমলাপাড়া বিট অফিসের দূরত্ব মাত্র ৫০ গজ। বৃহস্পতিবার থেকে আগুন শুক্রবার সারাদিন ধরে জ্বললেও বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানকে ফোন করলে তিনি আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই বলে দায় এড়িয়ে যান।
গাজীপুরের ইকবাল সিদ্দিকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, শালবনে আগুন দেওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে একটি চক্র শাল-গজারিগাছ পুড়িয়ে দিয়ে বনভূমি দখল করতে চায়। শালগাছ কখনো চারা থেকে হয় না। গাছের কাণ্ড ও মূল থেকে এর জন্ম। আগুনের কারণে নতুন করে শালগাছ জন্মাতে পারে না। প্রকৃতি বন্ধু হিসেবে পরিচিত এ শাল গাছ রক্ষার্থে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এছাড়া বনের ভেতর এমন আগুনের দায় বন বিভাগ কোনোমতে এড়িয়ে যেতে পারে না। ছোট টিলা মধ্যে শাল-গজারির সবুজ গাছপালার জন্য বিখ্যাত গাজীপুর জেলা। হাজারো উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে শাল-গজারিগাছ। কিন্তু প্রতিবছর শীতের শেষে বসন্তের লগ্নে রহস্যময় আগুনে শাল-গজারিগাছ, বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও বনের নানা ধরনের প্রাণীর ক্ষতি হয়।
প্রাণী, কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড় পুড়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগ সচেতনতায় সভা সেমিনার করলেও আগুনের লাগাম টানতে পারেনি এবারও।
বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় ৬৫ হাজার একর বনভূমি রয়েছে গাজীপুরে। জেলার মধ্যে ভাওয়াল, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কাঁচিঘাটা, রাজেন্দ্রপুররেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে এসব বনভূমির দেখভাল হচ্ছে। শিল্পায়ন, বন উপড়ে বনভূমি দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণের কারণে গাজীপুরের বনাঞ্চল এমনিতেই হুমকির মধ্যে রয়েছে কয়েক দশক ধরে। বন বিভাগের নজরদারির অভাবে বেপরোয়া এখন স্থানীয় বনদস্যুরাও। শীতের শেষে শালগাছের পাতা ঝরে যায়। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতি জেগে ওঠার সময় বনে আগুনের যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে বড় গাছগুলো কোনোমতে টিকে থাকলেও মাটি ফেটে বেড়ে ওঠা ছোট হাজারো উদ্ভিদ ও কাণ্ড থেকে গজানো শালগাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র ও নানা প্রাণ। বাতাসে কার্বনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনে যখন নতুন শাখা বের হয়, তখনই বন উজাড় করে তা দখলের জন্য রাতের আঁধারে আগুন দেয় একটি চক্র। তাদের উদ্দেশ্য, বনের গাছপালা পুড়ে বন পরিষ্কার করে তা দখলে নেওয়া। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় বন পরিষ্কার করা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, অসাধু এ চক্র বনের ভেতর আগুন দিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এতে বনের ভেতর থাকা হাজারো প্রাণীদের ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। আগুনে বনের ভেতরে থাকা সরীসৃপ সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে। কীটপতঙ্গ, বন্যপ্রাণী ও পাখির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাওয়াল বনের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে থাকা কিছু বিচিত্র লতাগুল্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এ ধরনের আগুনে। এছাড়া আমাদের বাতাসে কার্বনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম বলেন, বনে আগুন লাগার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের জনবল সংকটে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এরপরও আমরা বনের আগুনের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
Leave a Reply