নাসির উদ্দিন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ-
পটুয়াখালীর গলাচিপায় স্ত্রীকে নির্যাতন করে যৌতুকের টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্বামী মো. সুমন মোল্লা (২৭) এর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূ মিথিলা আক্তার (২৪) ও তার মা মোসা. মিনারা আক্তার প্রতিবেদকের কাছে এ বিষয়ে অবহিত করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে উপজেলার গলাচিপা ইউনিয়নের চর কারফার্মা গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত. মো. মতি মোল্লার ছেলে মো. সুমন মোল্লার সঙ্গে একই ইউনিয়নের পক্ষিয়া গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আ. হাকিম সরদারের মেয়ে মিথিলা আক্তার এর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিবাহের পর তাদের আয়শা আক্তার (৪) নামে একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। বিয়ের পর হতে মিথিলা আক্তারের বাবার বাড়ি হতে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী ও তার পরিবার। যৌতুকের টাকার জন্য মিথিলা আক্তারকে তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রায়ই মারধরসহ নির্যাতন করত। এদিকে মিথিলা আক্তারকে মারধর করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতে মিথিলা আক্তার তার স্বামীসহ ৩ জনকে আসামী করে গলাচিপা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি যৌতুক নিরোধ আইনের ৩/৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলার নম্বর সি.আর ২৬৯/২০২৩, তারিখ- ৩০/০৩/২০২৩ ইং। মামলা সূত্রে ও মিথিলা আক্তার জানান, বিয়ের পর হতে তাকে বাবার বাড়ি হতে ২ লক্ষ টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী ও তার পরিবার। মিথিলা আক্তার যৌতুকের টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে স্বামী মো. সুমন মোল্লা, দেবর মো. রেজাউল করিম, ভাশুর মো. সোহেল মোল্লা দলবদ্ধ হয়ে গৃহবধূ মিথিলা আক্তারকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং মো. সুমন মোল্লা তাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। বর্তমানে ৮ মাসের অন্তস্বত্তা হওয়ায় নির্যাতনের ফলে মিথিলা আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডা. শাম্মি আক্তার জানান, আমার চিকিৎসাধীনে মিথিলা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো কালো দাগ আছে। চিকিৎসা করিয়ে ছাড়পত্র নিয়ে সে এখন বাড়ি গেছে। মিথিলা আক্তার আরো বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি। আমার স্বামী ব্যবসা করার জন্য আমাকে ২ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। আমার বাবা গরিব মানুষ এত টাকা কোথায় পাবে। এ বিষয়ে মিথিলা আক্তারের মা মোসা. মিনারা বেগম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও একটি গরু আমার মেয়ের জামাইকে দেই। কিন্তু এর পরেও তারা যৌতুকের জন্য প্রায়ই আমার মেয়েকে মারধর করত। আমার মেয়ে ৮ মাসের অন্তস্বত্তা। আমি মেয়ের বাড়িতে গেলে যৌতুকের জন্য আমার সামনেই আমার মেয়েকে আবার মারধর করে। আমি আমার মেয়েকে বাঁচাতে গেলে আমার পুত্রা সোহেল ও রেজাউল আমাকে পর্যন্ত এলোপাথারীভাবে মারধর করে। আমি ওদের মায়ের মত। আমাকেও ওরা ছাড় দেয় নি। এ বিষয়ে মো. সুমন মোল্লার মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সে বিষয়টি এড়িয়ে যান। গলাচিপা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শোণিত কুমার গায়েন বলেন, আদালতে মামলা হয়েছে। বিষয়টি আদালত দেখবেন।
Leave a Reply