নিউজ ডেক্সঃ-
পাকিস্তানের বিপক্ষে পুরোনো সেই হতাশার গল্পই লিখলো বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ভারতের মাটিতে হবে বিশ্বকাপ। তার আগে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্স চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে! এমন ব্যাটিং স্বর্গেও বুধবার নাঈম-লিটন-তাওহীদরা ব্যর্থ হওয়ায় এশিয়া কাপের সুপার ফোরে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে অস্বস্তির হার দিয়ে!
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেও সাকিব আল হাসানদের এমন বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হয়েছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ব্যর্থতা কিছুটা হলেও পেছনে ফেলা গেছে। কিন্তু সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দেখা গেলো সেই একই চিত্র। এ যেন ‘এক পা এগুলে দুই পা পেছনোর’ মতো অবস্থা। বোলিং ইউনিট হিসেবে ভালো অবস্থানে থাকলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় সব হারাচ্ছে সাকিবের দল। প্রতিপক্ষের বোলিং, মাঠের আয়তন, কৌশল; এসব নিয়ে না ভেবে দৃষ্টিকটূ সব শট খেলে সাজঘরে ফিরছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তাতে সংগ্রহ সামান্যই থেকে গেলো। বুধবার সাকিব ও মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির পরেও বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে রান তুলতে পেরেছে মোটে ১৯৩!
এমন অবস্থা তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক ছিল না। তামিম ইকবালের ইনজুরিতে ওপেনিং পজিশনে সমস্যা তৈরি হয়েছে। লঙ্কানদের বিপক্ষে তরুণ দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও নাঈম শেখকে ওপেনিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দু’জনই ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজকে নামানো হয়। আগের ম্যাচে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে সাফল্য পেলেও বুধবার গোল্ডেন ডাক মেরেছেন অফস্পিনিং এই অলরাউন্ডার।
মিরাজকে হারিয়ে এদিন বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খেয়েছে। সেই ধাক্কা সামলে উঠার আগে টপ অর্ডারে তিন ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে। মেক শিফট ওপেনার দিয়ে মাঝে মধ্যে কাজ চালানো গেলেও প্রতিনিয়ত এটি সমাধান হতে পারে না। স্কোয়াডে এনামুল হক বিজয়, তানজিদ হাসান তামিম থাকতেও এই ম্যাচে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে মিরাজকে সুযোগ দেওয়াটা দৃষ্টিকটূই হয়ে থাকলো! যেখানে ছিলেন নিয়মিত ওপেনার লিটনও। তবে ওপেনিংয়ে না খেললেও শান্তর পজিশনে লিটন ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। চোখ ধাঁধানো শটে বড় রানের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু শাহীন শাহ আফ্রিদির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটি খেলার লোভ সামলাতে পারলেন না ৪.৫ ওভারে। ফলে খোঁচা দিয়ে আউট হয়ে সম্ভাবনাময় ইনিংসের সমাপ্তি টেনেছেন নিজেই। ভালো উইকেটে ব্যাটিং পেয়ে ওপেনার নাঈম শেখও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। দারুণ এক ডেলিভারিতে আজ তাওহীদও ব্যর্থ হয়েছেন। এই নিয়ে এশিয়া কাপের তিন ম্যাচে তাওহীদের সার্ভিস পায়নি বাংলাদেশ।
৪৭ রানে চার উইকেট হারানোর পর দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান মিলে দারুণ জুটি গড়ে দলের স্কোরকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। একটা সময় মনে হচ্ছিলো সহজেই ভালো স্কোরও পেয়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটারদের তো গেম অ্যাওয়ারনেসের ঘাটতি প্রবল। নয়তো দারুণ খেলতে থাকা সাকিব কেন ওই সময় এমন শট খেলে আউট হবেন?
এরপর শামীম হোসেন, মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেনের কেউই ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে পারেননি। আর তাতে ৩৮.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারানো বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে থামে ১৯৩ রানে। সাকিবের ৫৩ কিংবা মুশফিকের ৬৪ রান কোনও কাজেই আসেনি শেষ পর্যন্ত। অথচ সাকিব আউটের পর মুশফিক শুরুর মতো শেষটাতে অভিজ্ঞতার ছাপ রাখতে পারতেন। কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। আফিফের সামনে সুযোগ ছিল লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার। কিন্তু তিনি ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে পারেননি।
বাংলাদেশের ব্যর্থতায় লাহোরের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ১৯৪ রান মামুলিই হওয়ার কথা। হয়েছেও তাই। বল হাতে সেভাবে চাপ তৈরি করতে পারেনি তাসকিন-শরিফুল-মিরাজরা। তিনটি উইকেট তুলে নিতে পারলেও পাকিস্তানের হাতেই থেকেছে ম্যাচের কর্তৃত্ব। তাতে ৩৯.৩ ওভারে কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান দল। এই অবস্থায় বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ নিয়ে চিন্তার কিছু না থাকলেও বিশ্বকাপের আগে নতুন করে ব্যাটিং নিয়ে দুর্ভাবনা থাকছেই!