আঃ হামিদ মধুপুর টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ-
টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌরসভাধীন মাস্টারপাড়া এলাকায় মাত্র ২০০ টাকার জন্য ২০২০সালে একই পরিবারের ৪জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে মধুপুরের সাগর মিয়া।
তিন বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়ে মাত্র চার মাসের মাথায় ঠিক একই কায়দায় তার স্ত্রী কে সাথে নিয়ে সাভার আশুলিয়া এলাকার একই পরিবারের তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সাগর দম্পতি।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গাজীপুরের সফিপুর এলাকা থেকে ইশিতাসহ সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
সাগর দম্পতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে র্যাব বলছে, কবিরাজ সেজে ওই বাসায় যান সাগর-ঈশিতা দম্পতি। চিকিৎসার নামে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করার পর লুটপাট চালান তাঁরা।
কিন্তু মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পেয়ে তাঁরা ক্ষিপ্ত হন। এই আক্রোশ থেকে তিনজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
র্যাবের তথ্য মতে, বাবুল ও শাহিদা পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাঁদের ছেলে মেহেদী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
বাবুলের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার গরুড়া (ফুলবাড়ী) গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সইর উদ্দিন।
র্যাব জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাভারের বারইপাড়া এলাকায় একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে গিয়ে শারীরিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন বাবুল। এ সময় পাশের দোকানে চা খেতে থাকা সাগর কবিরাজ ও বাবুলের কথোপকথনে বাবুলের সমস্যার কথা জানতে পারেন।
পরে কৌশলে বাবুলকে ডেকে নিয়ে কথা বলে সাগর বুঝতে পারেন, ভেষজ চিকিৎসায় বিশ্বাস আছে বাবুলের।
সাগর তাঁর স্ত্রীকে একজন ভালো কবিরাজ হিসেবে তুলে ধরেন। বলেন, বাবুলের সমস্যার সমাধান তিনি করে দিতে পারবেন। চিকিৎসার জন্য বাবুলের সঙ্গে সাগরের ৯০ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি হয়। ওই দিন রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে বাবুলের বাসায় যান সাগর।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, সাগর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাসায় ডাকাতির ফন্দি আঁটেন। পরিকল্পনামতো সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার এক ওষুধের দোকান থেকে এক বাক্স (৫০টি) ঘুমের ওষুধ কেনেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘুমের ওষুধ শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে ভেষজ ওষুধ বলে বাবুলের পরিবারের সবাইকে খাইয়ে দেন তাঁরা। এতে তিনজনই অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর সাগর ও তাঁর স্ত্রী মিলে সবার হাত-পা বেঁধে লুটপাট শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
এর আগে ২০২০ সালে মধুপুরে একই কৌশলে একই পরিবারের চারজনকে খুন করা হয়। ওই ঘটনায়ও সাগর জড়িত ছিলেন। সে সময় র্যাব-১২-এর সদস্যরা সাগরকে গ্রেপ্তার করেন।
মাত্র ২০০ টাকার জন্য সাগর ওই খুন করেছিলেন জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, এরপর সাড়ে তিন বছর কারাগারে থাকার পর চলতি বছরের জুনে জামিনে মুক্তি পান সাগর। এর চার মাসের মাথায় একই পরিবারের তিনজনকে খুনের ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেল।