নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
মুন্সীগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত এক দম্পতির ব্যাংকে ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৪ বছরের চাকরি জীবনে তাদের ব্যাংক হিসাবে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া তাদের নিজের ও সন্তানের নামে নগদ ও এফডিআর মিলিয়ে ১০ কোটি টাকা রয়েছে। তারা এই অর্থ ঘুষ- দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। এই সাব- রেজিস্ট্রার দম্পতি হলেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় কর্মরত একেএম ফয়েজ উল্লাহ ও তার স্ত্রী একই জেলার শ্রীনগর উপজেলা কর্মরত রেহেনা বেগম। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রকৃত মূল্য থেকে কম মূল্য দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি ও ঘুষের বিনিময়ে দলিল সম্পাদন কোটি কোটি আয় করেছেন তারা। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একেএম ফয়েজ উল্লাহ গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, “মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ সালে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করি। সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি নেওয়ার পর কোনো সম্পদ অর্জন করিনি। আমাদের আগের যেসব জমিজমা, প্লট ও ফ্ল্যাট ছিল, তা বিক্রির করে সেই টাকা আমরা ব্যাংকে লেনদেন করি। আমাদের কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। দুদকের তথ্যমতে, মুন্সীগঞ্জের এ সাব-রেজিস্ট্রার দম্পতির বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ার পর সংস্থাটি প্রাথমিক অনুসন্ধান করে। সেই অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরই পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের সম্পদের তথ্য জানতে বিভিন্ন ব্যাংক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রিহ্যাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ফয়েজ উল্লাহ ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগমের বিরুদ্ধে তাদের ১৪ বছরের চাকরি জীবনে ঘোষিত পেশা, অর্থের উৎস ও ব্যাংক হিসাব খোলার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে লেনদেনে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নিজেদের ও সন্তানের নামে নগদ ও এফডিআর হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংকে ১০ কোটি টাকা জমা থাকার অভিযোগও পেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এ অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এ দম্পতি ও তাদের তিন সন্তানের নামে বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য থাকলে তা ২৮ আগস্টের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। তথ্য বলছে, দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে সাব-রেজিস্ট্রার ফয়েজ উল্লাহ ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য ও এফডিআরের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ফয়েজ উল্লাহ ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ২০০৯ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরি ছাড়া তাদের আর কোনো আয়ের উৎস নেই। অথচ তাদের বেতন-ভাতা বাবদ যে পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন, সেই আয়ের বাইরে তাদের ব্যাংক হিসাবে এখন পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন এর বাইরে তাদের আরও কোনো ব্যাংকে বেনামি হিসাব আছে কি না, বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট আছে কি না, দুদকের অনুসন্ধান টিম তার তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করছে।
Leave a Reply