ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চরছয়ানী গ্রামে ঘরে ঢুকে সৌদিপ্রবাসী শাহ আলমের স্ত্রী জেকি আক্তার (৩৫), তার দুই পুত্র মাহিন (১৪) ও মহিনকে (৭) কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় খুনি জহিরুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার একটি বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার জহিরুল ইসলাম নিহত জেকি আক্তারের বড় বোন শিল্পী আক্তারের মেয়ের জামাই এবং নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে জহিরুল ইসলামকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক স্বাগত সৌমের আদালতে নেওয়া হলে ট্রিপল মার্ডারে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জহিরুল ইসলাম নিহত জেকি আক্তারের বড় বোন শিল্পী আক্তারের কন্যা আনিকা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। যার জেরে আনিকা প্রায়ই তার বাবার বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবদী গ্রামে চলে আসতো। বর্তমানেও আনিকা তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
বড় বোন শিল্পী আক্তারের পরিবারে বেশ প্রভাব ছিল নিহত জেকি আক্তারের। দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সোমবার সকাল ৮টার দিকে খালা শাশুড়ি জেকি আক্তারের বাসায় আসে জহিরুল। সেখানে নাস্তা খেয়ে চলে যায় সে। এরপর রাত সাড়ে রাত ৮টার দিকে পুনরায় জহিরুল জেকি আক্তারের বাড়িতে যায়। সেখানে জেকি আক্তারের কাছে তার শাশুড়ি (শিল্পী আক্তার) ও নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা শুরু করলে জেকির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় জহিরুলের। একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে জহিরুল ঘর থেকে বঁটি নিয়ে জেকি আক্তারকে মাথার পেছন দিকে ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। জেকির চিৎকারে ঘুমিয়ে থাকা তার বড় ছেলে মাহিন মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে জহিরুল তাকেও কোপ দেয়। মাহিন দৌড় দিয়ে নিজ রুমে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা ও চিৎকার শুরু করলে জহিরুল সেখানে গিয়ে গামছা দিয়ে মাহিনের মুখ বেঁধে ফেলে পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে মায়ের পাশে এনে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে।
এ সময় ছোট ছেলে মহিন ঘুম থেকে ওঠে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে চিনে ফেলতে পারে একথা চিন্তা করে বাটাল এনে মহিনের দিকে তাকালে মহিন ভয়ে বাথরুমে চলে যায়। পরে জহিরুল বাথরুমে গিয়ে মহিনের কণ্ঠনালিতে বাটাল ঢুকিয়ে দেয় ও পরে তার মাথায় বাটাল ঢুকিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত তার লাশ বাথরুমে ফেলে রাখে। এ সময় ঘুমিয়ে থাকা ৭ মাসের ওজিহা তাকে চিনতে পারবে না ভেবে জহিরুল তাকে খুন করেনি। পরে রাত ১টার দিকে জহিরুল জেকি আক্তারের ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, ট্রিপল খুনের ঘটনায় নিহত জেকি আক্তারের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. সোনাহর আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. জয়নাল আবেদিন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন, বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চরছয়ানী গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদিপ্রবাসী শাহ আলমের বাসার দরজা ভেঙে তার স্ত্রী জেকি আক্তার, দুই পুত্র মাহিন ও মহিনের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় শাহ আলমের সাত মাস বয়সী কন্যাসন্তান ওজিহাকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।