মোঃ ফিরোজ শাঁই,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
শনিবার (২৮ অক্টোবর) শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ আর মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচিকে ঘিরে বৃহস্পতিবারের (২৬ অক্টোবর) মতো শুক্রবারও (২৭ অক্টোবর রাজপথে সরব দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। লাঠির মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে থেকে মিছিল ও শোডাউন করতে দেখা গেছে তাদের।
বিশেষ করে মহাগর, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি রাজপথ পাহাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, শনিবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ সফল করতে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সমাবেশের আগে-পরে রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতি-শুক্রবার নেতাকর্মীদের রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সরব উপস্থিতি ছিল।
তারা বলেন, শনিবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিরোধীদের যেকোনও আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সমাবেশে আসবে। নেতাকর্মীদের অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক ধরে মিছিল সহকারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সমাবেশস্থলে আসতে বলা হয়েছে। আগ বাড়িয়ে আক্রমণ না করার বিষয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হলেও যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী দৈনিক প্রতিদিনের বার্তাকে জানান, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশমতো বৃহস্পতি ও শুক্রবার আমাদের নেতাকর্মীরা রাজপথ পাহারা দিয়েছে। তারা বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে সতর্ক পাহারা দিয়েছে, মিছিল করেছে। কেন্দ্র থেকে দেওয়া নির্দেশনা সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে গেছে। সে অনুযায়ী নেতাকর্মীরা শনিবারের সমাবেশে আসবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতারা ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করেছে। সেগুলো বহন করার জন্য বাঁশের লাঠিসোটা প্রস্তুত করেছেন। এই দুই দিন অনেক স্থানে লাঠি নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি দৈনিক প্রতিদিনের বার্তাকে জানান, বৃহস্পতিবার মহানগরী উত্তরের প্রায় সব থানায় সতর্ক অবস্থানে থেকে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সব থানার পাশাপাশি ওয়ার্ডেও মিছিল করেন তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে আক্রমণ এলে যাতে তা প্রতিহত করা যায়, আত্মরক্ষার্থে সে জন্য অনেকে লাঠি নিয়ে মিছিল করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ দৈনিক প্রতিদিনের বার্তাকে বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিভিন্ন থানায় মিছিল হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে থেকে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। রাজপথ পাহারা দেওয়া হয়েছে, যাতে বিএনপি-জামায়াত কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে। তবে লাঠি নিয়ে মহড়া দেওয়ার কোনও তথ্য জানা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিন বিকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অন্তর্গত প্রতিটি সংসদীয় আসনে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ শোভাযাত্রা করে যুবলীগ। এর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে জরুরি সভা করেছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। সংগঠনটির তাদের নেতাকর্মীদের শুক্রবার রাতে সতর্ক অবস্থানে থাকার পাশাপাশি শনিবারের সমাবেশ সফল করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা মহানগর ও আশপাশের নেতাকর্মীরা দলে দলে আসবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। সকাল ১১টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হবে। আড়াইটায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। শনিবার স্মরণকালের সর্ববৃহৎ শান্তি সমাবেশ হবে।’
বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। এদের দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িক আরও দু-একটি শক্তিকে নিয়ে তারা অশুভ খেলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। সার্বক্ষণিক সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। মিটিং শেষে চলে গেলেই হবে না। কাল একটু দেখেশুনে যাবেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। সবাই নিজে নিজে দায়িত্ব নেবেন, সবার দায়িত্ব আছে। এই যুদ্ধ আমাদের সবার। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটা মনে করেই মাঠে থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৫ অক্টোবর) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, নির্বাচিত দলীয় জনপ্রতিনিধি এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে ২৬ ও ২৭ অক্টোবর রাজধানীর অরিগলি পাহারা দেওয়া এবং ২৮ অক্টোবর লাঠিসোটা নিয়ে আসতে বলা হয়। ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক পাহারায় থাকতে বলার পাশাপাশি আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণ হবে বলেও উল্লেখ করেন শীর্ষ নেতারা।