কে এম ইউসুফ (হাটহাজারী) চট্টগ্রামঃ-
এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ও প্রাচীন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহ্ফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেছেন- জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নানা রকমের গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। এসব গুনাহের মূল কারণ হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ সা. একটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ার মোহই সকল গুনাহের মূল’। সুতরাং দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে পরকালমুখী হতে পারলে সহজেই আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানি করে না, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসেন।
তিনি বলেন, দুনিয়াতে যতো নাজ ও নিয়ামত রয়েছে, তা আখেরাতের নিয়ামতের কাছে একটা পুরনো কাপড়ের নেকড়ার সমপর্যায়েরও নয়। দুনিয়ার সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী, আখেরাতের সকল কিছুই চিরস্থায়ী। অথচ এই দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা নিজেদের স্থায়ী জীবনকে নষ্ট করতেছি। তিনি বলেন- 'আপনারা দারুল উলূম হাটহাজারি মাদ্রাসার মতো দ্বীনি মাদরাসাসমূহে যে সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-সদকা করছেন, এগুলোর সাওয়াব পরকালে যাবে।
তিনি বলেন, দান-সদকা আল্লাহর গোস্বাকে ঠান্ডা করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, অপমৃত্যু থেকে হেফাজত করে, বিপদাপদ দূর করে এবং সকল কাজে বরকত আনয়ন করে। তাই বেশি বেশি দান সদকা করবেন। অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করবেন। দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে সাধ্যমতো সাহায্য করবেন। আপনাদের এসব সাহায্য-সহযোগিতায় বহুমুখী কল্যাণ ও বরকত অর্জিত হবে।
আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার দ্বীনি কার্যক্রম পরিচালনা ও উন্নয়নে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করছেন, তাদের শোকরিয়া আদায় করেন এবং তাদের সকলের দুনিয়াবী বিপদাপদ দূর ও আখেরাতে উত্তম বিনিময়ে লাভের জন্য দোয়া করেন।
হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে তিনি আখেরী নবীর উম্মত হিসেবে আমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন। তারপরের নিয়ামত হচ্ছে, আমাদের কেউ এই জগতে ছিলাম না; তিনি আমাদেরকে এই জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকাত করে পাঠিয়েছেন। আর আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক তখনই হতে পারবো, যখন আমরা আল্লাহর প্রথম নিয়মত কুরআনকে আঁকড়ে রাখতে পারবো এবং কুরআনের রঙে নিজেদেরকে সাজাতে পারবো। অন্যথায় আমরা শ্রেষ্ঠ জীব হওয়া তো দূরের কথা, বরং আমরা হবো সবচেয়ে অধম সৃষ্টি এবং জাহান্নামের লাকড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে কুরআন।
হেফাজত আমীর আরো বলেন, যার কুরআনের সাথে সম্পর্ক হবে, তার সম্পর্ক হবে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সাথে। আজ দুনিয়াতে যতো জুলুম-অত্যাচার চলছে, তার কারণ হচ্ছে কুরআন থেকে দূরে সরে পড়া।
হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে আরো বয়ান রাখেন- আল্লামা আবদুর রব আজমী ভারত, আল্লামা শেখ আহমদ, আল্লামা মুফতি আহমাদুল্লাহ, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, আল্লামা সাজেদুর রহমান, আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, মাওলানা আবদুল বাসেত খান সিরাজী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা ওসমান ফয়জী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, ড. আফম খালিদ হোসেন, মাওলানা মুশতাকুন্নবী কাসেমী, মাওলানা ফুরকানুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা খোবাইব, মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা বদরুল আলম হামিদী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দস্তারবন্দি সম্মেলন উপলক্ষে মাহফিলের আগের দিন ও মাহফিলের দিন শুক্রবার বাদ ইশা প্রতিষ্ঠানটির গত শিক্ষাবর্ষে (১৪৪৩-৪৪হি.) দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ আড়াই হাজার তরুণ আলেমকে প্রতিষ্ঠানের নাম ও মনোগ্রাম খচিত বিশেষ সম্মানসূচক পাগড়ী প্রদান করা হয়।
এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ভবন, ছাত্রাবাস ভবন, বিশাল সামিয়ানা এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কসহ সমগ্র হাটহাজারী এলাকা হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ ও তরুণ আলেমের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।