ডেস্ক রিপোর্টঃ-
‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’ বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগ
বহির্বিশ্বের আদলে শুধু একটি ইউনিক নম্বরে সংরক্ষিত থাকবে রোগীর যাবতীয় তথ্য। এ লক্ষ্যে চালু করা হচ্ছে স্বাস্থ্য কার্ড। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করে বিনামূল্যে মিলবে এই কার্ড। রোগীর গোপনীয়তা ও সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হচ্ছে এই বিশেষ ব্যবস্থা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ছয় কোটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যকার্ড পৌঁছানোর কাজ হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই স্বাস্থ্য কার্ডে থাকা নম্বরে দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে লগইন করলেই চিকিৎসক ও রোগী উভয়ই বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, স্বাস্থ্য খাত ডিজিটাল করার লক্ষ্যে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও সহজতর করতে সরকারের উদ্যোগে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো এবার বাংলাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে রোগীদের জন্য হেলথ আইডি সংবলিত হেলথ কার্ড। জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যক্তিগত তথ্যের মতোই এই কার্ডে থাকবে স্বাস্থ্যসেবা তথ্য। সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য তথ্য আদান প্রদান এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য তথ্য সংরক্ষণের একক প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করার লক্ষ্য নিয়ে ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
বর্তমানে ঢাকা মহানগরের মধ্যে জাতীয় অর্থোপেডিক পুনর্বাসন কেন্দ্র (নিটোর) এবং ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের হেলথ আইডি প্রদান পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে পাইলটিং কার্যক্রম শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এই কার্ড পেতে হলে যেকোনও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বরের (১৮ বছরের নিচে) কপিসহ হাসপাতালে যেতে হবে। পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা হাতে পেয়ে যাবেন এই কার্ডটি। বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ডিজিটাল পদ্ধতির আওতাভুক্ত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবা পেতে হলে প্রথমেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিবন্ধিত হতে হবে। যেসব বেসরকারি হাসপাতাল নিজস্ব অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তাদের নিজস্ব সফটওয়্যারকে শেয়ারড হেলথ রেকর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের এই মুহূর্তে কোনও নিজস্ব সফটওয়্যার নেই, তারা নতুন সফটওয়্যার প্রণয়নের ক্ষেত্রে শেয়ারড হেলথ রেকর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য কী কী করা লাগবে তাও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের এই মুহূর্তে কোনও নিজস্ব সফটওয়্যার নেই এবং নতুন সফটওয়্যার প্রণয়নের জন্য এই মুহূর্তে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং শেয়ারড হেলথ রেকর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার উপযুক্ত একটি সফটওয়্যার স্বাস্থ্য অধিদফতর সরবরাহ করবে।
যে কোনও অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আইডি এবং পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এরপর ওই সফটওয়্যারটি হাসপাতালের নিজস্ব সার্ভারে ইন্সটল করে প্রয়োজন মতো পরিবর্তন/পরিবর্ধন করে ব্যবহার করতে পারবেন।
স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতাভুক্ত করা, ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’-এর মাধ্যমে সব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্তীকরণ, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ‘হেলথ আইডি’ নম্বর থাকা, সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় করা, চিকিৎসাসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি, নাগরিকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও সুশৃঙ্খল, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এর লক্ষ্য।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, রোগীদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব স্বাস্থ্য সেবার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এই ডিজিটাল ডাটাবেজে। আগের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাগজ হারানোর ভয় থাকবে না। রোগীর বহন করে নিতে হবে না কোনও কাগজ। অনলাইনেই থাকবে সব তথ্য। এছাড়া শুধু হেলথ কার্ডের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা। সব পরীক্ষা-নীরিক্ষার রিপোর্ট চলে যাবে ইমেইলে।অনলাইনে ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা শাহাদাত হোসেন দৈনিক প্রতিদিনের বার্তাকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে সংযুক্ত করে রোগীর বিস্তারিত তথ্য একটি ডাটাবেজে থাকবে। এই তথ্যগুলো থাকলে একজন রোগী যখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসবেন তখন একটি নম্বর কিংবা কার্ড দিয়েই তার যাবতীয় চিকিৎসার তথ্য দেখা যাবে। রোগীর ল্যাব টেস্ট, চিকিৎসকের পরামর্শ, সব তথ্যই সেখানে চলে আসবে। চিকিৎসক লগইন করলে রোগীর যাবতীয় তথ্য দেখতে পারবেন। আমরা সারা দেশে সিস্টেম চালু করে ফেললে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যখন রোগী চিকিৎসা নিতে যাবেন, তখন তার সব তথ্য দেখতে পাবেন। নতুন করে কিছু করতে হবে না, কার্ডের নম্বর থাকলেই হবে।
তিনি আরও বলেন, কার্ড সঙ্গে না থাকলেও কিংবা নম্বর মনে না থাকলেও এনআইডি কিংবা জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিয়েও সিস্টেমে তথ্য পাওয়া যাবে। তবে এখানে কোন চিকিৎসক দেখতে পারবেন, আবার রোগীর অনুমতির বিষয় থাকে সেসব বিষয় মাথায় রেখে সিস্টেম ডিজাইন করা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মাধ্যমে আমরা পাইলটিং করবো, আর পরীক্ষামূলকভাবে আমরা কিছু জায়গায় চালু করেছি এবং আইডি আমরা দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা দুটি জেলায় ৮টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করবো। পাইলটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে আমরা আরও প্রতিষ্ঠানে চালু করবো। আমাদের ৬২টি হাসপাতালে অটোমেশন করা হয়েছে, তার মধ্যে ৮টিতে আমরা পাইলটিং করবো।
এর আগে, চলতি বছরের শুরুতেই দেশে সবার জন্য হেলথ কার্ড করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সেসময় সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে তিনি বলেছিলেন, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমরা ডিজিটালাইজড করছি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার কারণ হচ্ছে, দেশে সবার জন্য একটি হেলথ কার্ড হবে। এতে সবার স্বাস্থ্যের সব তথ্য থাকবে। অন্যান্য দেশেও এভাবে হেলথ কার্ড থাকে।
অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ক্রমান্বয়ে সব সরকারি হাসপাতালে অটোমেশন করা হবে। সেটির একটি প্রকল্প প্ল্যানিং কমিশনে আছে। পাশ হয়ে গেলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। সারা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে আগামী পাঁচ বছরে ছয় কোটি মানুষকে আইডি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। ২০৩০ সাল নাগাদ সারা দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে বেসরকারি সহ সব প্রতিষ্ঠানকে হেলথ আইডি’র আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
Leave a Reply