রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ-
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রংপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী জিএম কাদের বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করি নাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সংসদে থাকার জন্য নির্বাচন করছি। কোনও ভাগাভাগির নির্বাচন করছি না। আমি তো তাদের আসন ভাগ দিইনি, তাহলে ভাগাভাগি হলো কীভাবে? আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ধরনের কোনও চুক্তি করি নাই। আগে আমরা মহাজোটে থাকলেও এখন নেই।’
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘এবারের নির্বাচন মহাজোটগতভাবে হচ্ছে না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনও ভাগ-বাঁটোয়ারার নির্বাচন করছি না। অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। আমি পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই। এর আগে আমরা মহাজোটের অংশ ছিলাম। এখন কোনও মহাজোট বা জোটের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক নেই।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশিশক্তি, অবৈধ অর্থের ব্যবহার ও নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচনের বিধিমালা মেনে চলতে হবে। এটা যদি তারা মেনে না চলেন আগেও আমি বলেছি আবারও বলছি, আমরা দলীয়ভাবে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।’
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর জিএম কাদের একবারের জন্যও প্রেসের সামনে আসেননি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এত দিন নানান কারণে আমি কোনও কথা বলি নাই। কিন্তু রংপুরে এসে আজ সব কথা বলতে চাই। নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমাদের মধ্যে সব সময় ভয় ছিল, সরকার নির্বাচনি বৈতরণি পার হওয়ার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন করবে কিনা। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। সে কারণে আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বাহ্যিকভাবে স্বাভাবিক হলেও মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা আছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অস্বাভাবিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বিএনপি সরকার পতনের ঘোষণা দিয়েছে। সরকার নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড়। এ অবস্থায় আমাদের অনেক বিষয় ভাবতে হয়েছে।’
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত
দলের মধ্যে কোন্দলের কথা ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে অস্থিতিশীলতা ঢুকিয়ে দেওয়ায় প্রচণ্ড হুমকিতে ছিলাম। আমাদের নেতৃত্ব চলে যাবে, নতুন নেতৃত্ব আনার অপচেষ্টা; সবকিছু ম্যানেজ করতে হয়েছে। আমাদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনার অপচেষ্টাসহ নানান ঝুঁকি কাজ করেছে। আমরা এখনও ঝুঁকিমুক্ত হতে পারি নাই। দলের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য সব সময় আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে হয়েছে। পাশাপাশি রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আমাকে এখন রংপুরসহ সারা দেশের মানুষ একনামে চেনে। বিদেশেও আমার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। রংপুরের সন্তান হিসেবে এ জন্য আমি গর্বিত।’
সাবেক চেয়ারম্যান ও বড় ভাই প্রয়াত এরশাদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘কারাগারে থেকে এরশাদ পরপর দুবার ৫টি করে আসনে জয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ তাকে স্মরণ করে।’ এ সময় আবেগতাড়িত হয়ে জিএম কাদের ঘোষণা করেন, আমি মারা গেলে আমাকে নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে আমার মা-বাবার পাশে দাফন করার জন্য অনুরোধ করছি। আমার পরিবারকেও বিষয়টি জানিয়েছি। ইতোমধ্যে সেখানে জমি কিনে রেখেছি। রংপুরে জন্ম, এখানেই যেন দাফন করা হয় সেটি আবারও জানিয়ে দেন তিনি।
মতবিনিময় শেষে জিএম কাদের দলের শত শত নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেঁটে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৈত্রিক নিবাস স্কাইভিউ বাসভবনে যান। এ সময় রাস্তার দুপাশে পথচারীসহ বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মতবিনিময়কালে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জাপা নেতা আজমল হোসেন লেবুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বেলা সোয়া ১১টায় জিএম কাদের নগরীর দর্শনা এলাকায় দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করেন। এরপর তিনি নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে মা-বাবার কবর জিয়ারত ও কেরামতিয়া জামে মসজিদে দু-রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন।