বনানী (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ-
সহিদ ও কাশেম। একজন থাকে বনানীর গোডাউন বস্তিতে, আরেকজন মহাখালী ওয়্যারলেস গেইটে। তারা বনানী থানার পুলিশের সোর্স। সোর্স হিসেবে জনকল্যাণের জন্য তারা যতটা না কাজ করেন, জনগণের কাছে তার চেয়ে বেশি তারা আতঙ্কের। দাপট দেখিয়ে এলাকার লোকজনকে প্রায় সময় ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মত অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকায় ত্রাহী অবস্থা সৃষ্টি করেছেন তারা। তাদের ভয়ে বস্তি এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।
বনানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দারা জানান, এলাকার একটা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে একের পর এক অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের এই দুই সোর্স।
তবে পুলিশের দাবি, পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ অন্যায় বা প্রভাব বিস্তার করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী বস্তির বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, আমি কয়েক বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসি। কিছুদিন আগে সহিদ ও কাশেমসহ আরও তিনজন সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে মহাখালী টিএন্ডটি মাঠের পাশে আমার পথ অবরোধ করে। তারা আমার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা দাবি করে। পরে টাকা না দিতে চাইলে মামলার ভয় দেখিয়ে বনানী থানার দোতলায় নিয়ে নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে আমার বাসায় ফোন করলে ছোট ভাই এসে আট হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, সহিদ ও কাশেম দু’জনই থানার সোর্স হিসেবে কাজ করেন। তারা ইয়াবা ব্যবসা করেন। তাদের কাছে পুলিশের প্রতিনিয়তই আসা যাওয়া রয়েছে। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে তারা এলাকার অনেক মানুষকে হয়রানি করে যাচ্ছে।
আরেক ভুক্তভোগী সুমন মিয়া বলেন, সহিদ মামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের আতঙ্কের মধ্যে রাখে। পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে এলাকার লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। তার জ্বালায় বস্তির অনেক পরিবার আজ নিঃস্ব হয়েছে। আমরা তার সঠিক বিচার চাই। তার ঘরে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে। পুলিশ সব জেনেও কিছু বলে না।
কড়াইল বস্তির বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, সহিদ ও কাশেম এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে। ডিউটি পুলিশ এনে আমাদের হয়রানি করে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের বস্তির লোকজনদেরকে ফাঁসিয়ে দেয়। পরে সমস্যা সমাধানের কথা বলে অনেক টাকা দাবি করে। আমরা সরকারের কাছে বিচার দাবি করছি। সঠিক তদন্ত করে যাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, তাদের সাথে পুলিশের সখ্যতা থাকায় নিরীহ মানুষগুলো তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য দিয়ে সহজসরল মানুষদের আইনের মারপ্যাঁচে জড়ানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে সহিদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে গোডাউন বস্তিতে তার ঘরে খোঁজ করতে গেলে প্রথমে বাড়িতে আছেন বললেও পরে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তার স্ত্রী বলেন ঘরে নেই। সহিদের ঘরের দরজার উপরে সিসি ক্যামেরা লাগানো দেখা যায়। বস্তির ঘরে এমন সিসি ক্যামেরা থাকাটা প্রশ্নবিদ্ধ!
এলাকার সচেতন মহলের দাবি, তাদের কারণে কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়। পুলিশও যাতে সঠিক তথ্য নিয়ে পুরো এলাকাকে আতঙ্ক মুক্ত করেন।
এ বিষয়ে বনানী থানার ওসি কাজী সাহান হক বলেন, বনানী থানায় কোন সোর্স নেই। ওই দুই জনের বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply