যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ-
যশোরের অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় আফরোজা বেগম (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার (২ জুন) রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (প্রশাসন ও অর্থ) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এই নারীর মৃত্যু সনদে হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’র বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এর আগে, রবিবার বেলা ১১টার দিকে অভয়নগর থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে আফরোজার মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, আগের দিন শনিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম থেকে ৩০টি ইয়াবাসহ তাকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, বাড়িতে থাকা অবস্থায় পুলিশ আফরোজাকে মারধর করেন। এমনকি ঘরের ফ্যানের সঙ্গে তার চুল বেঁধেও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের ছেলে।
আফরোজা বেগম অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আবদুল জলিল মোল্লার স্ত্রী। তিনি স্বামী এবং এক ছেলেকে নিয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের নর্থ বেঙ্গল রোডে আক্কাস আলীর ভাড়া করা বাড়িতে বসবাস করতেন।
এই ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে রবিবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই-আলম সিদ্দিকীকে সভাপতি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘খ’ সার্কেল, জাহিদুল ইসলাম সোহাগকে সদস্য সচিব এবং কোর্ট পরিদর্শক রোকসানা খাতুনকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ সাংবাদিকদের বলেছেন, ইয়াবাসহ আফরোজা বেগমকে রাতে আটক করা হয়। পরদিন তিনি হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার ব্লাড প্রেসার ছিল ২২০ বাই ১১০। যশোর জেনারেল হাসপাতাল নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে যে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া গেছে। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল কি না তা এই কমিটি তদন্ত করে দেখবে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
স্বজনদের দাবি, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেফতারের পর নির্মম নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, ইয়াবাসহ আটক ওই নারী হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। পুলিশ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে নওয়াপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে আফরোজাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে ৩০টি ইয়াবা পাওয়া যায়। অভয়নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সহকারী উপপরদির্শক (এএসআই) সিলন আলী, শামসুল হক ও নারী কনস্টেবল রাবেয়া খানম অভিযানে ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে থানা হাজতে রাখা হয়। এ ঘটনায় রবিবার সকালে আফরোজার বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১)১০(ক) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আফরোজা থানায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থবোধ করলে থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আবারও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেখানকার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিতে বলেন। সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা।
আফরোজার ছোট ছেলে নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল্লার ভাষ্য, ‘রাতে আম্মু বাড়ির পাশে পানি আনতে যান। এ সময় বাড়িতে পাঁচ জন পুলিশ আসেন। এর মধ্যে সিলন দারোগা (এএসআই সিলন আলী) আম্মুকে তার কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। তার কাছে কিছু নেই জানালে তিনি (সিলন আলী) একজন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। তিনি আম্মুর শরীর তল্লাশি করেও কিছু পাননি। এরপর সিলন দারোগা আম্মুকে চড় দিতে দিতে মাটিতে ফেলে দেন। আম্মুকে মারতে নিষেধ করলে সিলন দারোগা আমাকেও দুটি চড় মারেন। গালিগালাজও করেন। এরপর আমার চোখের সামনে মায়ের চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে মারধর করে পুলিশ।’
আফরোজাকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সিলন আলী বলেন, ‘আফরোজাকে মারধর কিংবা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তার পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
Leave a Reply