মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী,সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ-
শিউলি (ছদ্মনাম)। বয়স মাত্র ১৭। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়। তার বাবা পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। চার বোনের মধ্যে শিউলি তৃতীয়। অভাবের সংসার।
তরুণীর বাবা বলেন, ধারদেনা করে তার বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি দুই মেয়েকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। অটোরিকশা চালিয়ে তার যে আয় হতো, তাতে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। এ অবস্থায় তার তৃতীয় মেয়ে শিউলিকে প্রতিবেশী সোহাগী টোপ দেন। বলেন, তার বড় বোন ফারজানা দুবাইয়ে থাকেন। তিনি তাকে দুবাইয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তবে এ জন্য তিন লাখ টাকা লাগবে। লোন করে তারা এ টাকা সোহাগীর হাতে দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি সোহাগী দালাল ধরে নারায়ণগঞ্জের ঠিকানায় শিউলির পাসপোর্ট করান। পরে ভ্রমণ ভিসায় গত বছরের ১৬ আগস্ট শিউলিকে সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাই পাঠায়।
দুবাই যাওয়ার কয়েক দিন পর শিউলি তার বাবাকে ফোন দেয়। বাবাকে বলে, তাকে দুবাইয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নির্যাতনে সে গুরুতর অসুস্থ। এরপর তিনি আর তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। গত ২৬ নভেম্বর তিনি জানতে পারেন, তার মেয়ে আর বেঁচে নেই। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তার লাশ দেশে আসে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের ভাষ্য, শিউলির বয়স আসলে ১৭ বছর ছিল। তবে দালাল কাগজে-কলমে দেখিয়েছিল ২১ বছর। তাকে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই কাজ তাকে দেয়া হয়নি। তাকে দুবাইয়ে বিক্রি করে দেয় মানব পাচারকারীরা। সেখানে তাকে যৌন নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে শিউলির বাবা ঢাকার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা করেন। মামলায় মানব পাচার ও খুনের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় আসামি হিসেবে ফারজানা ও সোহাগী নামের দুই নারীর নাম উল্লেখ করা হয়।ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেয়া হয়।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, লাশের সঙ্গে থাকা তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে মেয়েটির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা আছে ওপর থেকে পড়ে যাওয়া। দেশে মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে প্রতিবেদন এখনো আসেনি। মৃত্যুর আগে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না, তা জানার জন্য ফরেনসিক নমুনা সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।
শিউলির বাবা আরো বলেন, মানব পাচারকারীরা তার মেয়েকে দুবাই নিয়ে হত্যা করেছেন। মানব পাচারকারী-খুনিরা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।
আসামি ফারজানা সম্প্রতি দেশে ফেরেন বলে জানা যায়। মুঠোফোনে তিনি বলেন, শিউলিকে তিনি বলেছিলেন, দুবাইয়ে তার মালিকের আচরণ ভালো। কিন্তু মালিক বিদেশি কর্মীদের দিয়ে খারাপ কাজ করান। তিনি শিউলিকে আসতে বারণ করেছিলেন।
কিন্তু তাকে না জানিয়েই দুবাই চলে আসে। এরপরেও আমার (ফারজানার) মালিকের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে শিউলিকে মেরে ফেলার বিষয়টি অবহিত হয়ে দেশে জানিয়ে দিয়েছি।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে আদালত নির্দেশ দিলেও এখনো কোনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের পর তিনি মামলার নথিপত্র হস্তান্তর করবেন।
Leave a Reply