অনলাইন ডেস্ক:-
রিকন্ডিশন ইঞ্জিন ও মোটর পার্টসের পাইকারি ও খুচরা বিক্রির সর্ববৃহৎ স্থান পুরান ঢাকার ধোলাইখাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে পুরনো যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু হয়। এখানে গাড়ির সব ধরনের যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। যেকোনও গাড়ির ইঞ্জিন, হেডলাইট, ব্যাকলাইট, হ্যান্ডেল, স্ক্রু থেকে শুরু করে সব ধরনের নাট-বল্টু, লুকিং গ্লাস, ফোক লাইট, মাস্টার সুইচ, গাড়ির গ্রিল, ক্লাচ, গিয়ারবক্স, প্রপেলার শ্যাফ্ট, এক্সেল, ব্রেক, ব্যাটারি, স্টিয়ারিং ইত্যাদি বিক্রি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নবাবপুর মোড় থেকে শুরু করে ধোলাইখাল ও নারিন্দা পর্যন্ত পুরো ফুটপাতে পুরনো ইলেকট্রনিকস ও গাড়ির রিকন্ডিশন যন্ত্রপাতি বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার মাঝেও ছোট ছোট বিভিন্ন ধরনের পার্টসের দোকান রয়েছে। যার অধিকাংশই জাপান থেকে আমদানি করা। এখানে প্রায় সব ধরনের গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। বিশেষ করে টয়োটা, নিশান, হোন্ডা, মিৎসুবিশি, সুজুকি, মারুতির যন্ত্রাংশ বেশি। বাস ও ট্রাকের মধ্যে বেড ফোর্ড, ইসুজু, নিশান, হিনো, ভলবো, টাটা, অশোক লেল্যান্ড, টারসেল, আইয়ার, ক্যান্টার প্রভৃতি গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ফুটপাতে পার্টসের ব্যবসা করছেন মো. আশরাফ (৬৫)। জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়েছেন এই ব্যবসায়। তিনি বলেন, ফুটপাতে সব রিকন্ডিশন জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। এখানের সব মালামাল জাপান থেকে আমদানি করা। এখানে যেকোনও গাড়ির রিকন্ডিশন ইঞ্জিন ও মোটর পার্টস পাওয়া যাবে। কোনও না কোনও দোকানে আপনি যেকোনও গাড়ির যন্ত্রপাতি পাবেন। বাংলাদেশের মধ্যে রিকন্ডিশন ইঞ্জিন ও মোটর পার্টসের পাইকারি ও খুচরা বিক্রির সর্ববৃহৎ জায়গায় হচ্ছে ধোলাইখাল। এখানে দৈনিক কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
তিনি আরও বলেন, এই ব্যবসায় দৈনিক নির্দিষ্ট কোনও লাভ নেই। কোনো দিন দুই হাজার টাকা লাভ হয়, আবার কোনো দিন পাঁচ হাজার টাকাও হয়। মাঝেমধ্যে ৫০ হাজার টাকাও লাভ হয়। এটা আসলে বেচাকেনার ওপর নির্ভর করে। তবে সব মিলিয়ে মাসে লাখ টাকার বেশি আয় হয়। যত বড় ব্যবসা, তত বেশি শেয়ার। এই পার্টসের ব্যবসা মূলত সিন্ডিকেট সামলে করতে হয়। একা এত বড় ব্যবসা করে কূল-কিনারা পাওয়া যায় না। আমার সঙ্গে পাঁচ জন আছে। ছোট পরিসরেও অনেকে করে। তবে তারা আমাদের মতো ইমপোর্ট করে না। আমাদের থেকে নিয়েই টুকটাক বেচাকেনা করে।
সংশ্লিষ্ট বক্তিরা জানান, একটি গাড়িতে স্ক্রু ও নাটসহ অন্তত ৩০ হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ থাকে। এর মধ্যে কিছু প্রস্তুতকারক দ্বারা তৈরি করা হয়, কিছু সরবরাহকারীরা সরবরাহ করে থাকে। ধোলাইখালের ফুটপাতে সব রিকন্ডিশনারি মালামাল বিক্রি হয়। গাড়ির এমন কোনও পার্টস নেই, যা এই ফুটপাতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এই ফুটপাতের ব্যবসায় তেমন কোনও এক্সট্রা খরচও নেই। ফুটপাতে বসা প্রত্যেক দোকানদার পুলিশকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দিতে হয়, লাইনম্যানদেরও কিছু দেয়। আর মাঝেমধ্যে এলাকার ছেলেরা বিভিন্ন প্রোগ্রামে ‘কিছু’ নেয়।
মোজাম্মেল হক (৪৬) নামের আরেকজন ফুটপাতের পার্টস ব্যবসায়ী বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ধোলাইখালে পার্টসের দোকানে কাজ করেছি। সবকিছু ভালো করে বোঝার পর নিজেই এই পার্টসের ব্যবসা শুরু করছি। প্রায় ১৬ বছর হলো নিজেই ব্যবসা করছি। যদিও ফুটপাতে ব্যবসা করি, তবে অনেক শান্তি আছে। দোকানে তো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া লাগতো। এখানে এদিক-সেদিক ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে মাস পার হয়ে যায়। এই ব্যবসায় যত বেশি পরিশ্রম, তত বেশি ইনকাম। দৈনিক দুই-তিন হাজার টাকা লাভ থাকে। আবার কখনও দ্বিগুণেরও বেশি হয়। এর নির্দিষ্ট ঠিক-ঠিকানা নাই। আলহামদুলিল্লাহ, পরিবার নিয়ে সুখেই আছি।
সাইদুর রহমান নামের এক পার্টস দোকানদার বলেন, ধোলাইখালে পার্টসের দোকানে কাজ করা একজন শ্রমিক দৈনিক হাজার থকে ১৫০০-র বেশি আয় করে। এখানে কলেজছাত্ররাও কাজ করে। এই কাজ করতে গিয়ে শরীরে, চেহারায় কালি লেগে থাকে। এ জন্য অনেকে এই কাজকে ছোট মনে করে, অন্য চোখে দেখে। অথচ একজন দিনমজুরও মাসে এই কাজ করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা অনায়াসে ইনকাম করতে পারে। অনেক ভালো চাকরিতেও এত বেতন নেই।
Leave a Reply