ডেস্ক রিপোর্ট:-
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের কেউই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়—নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগ পরস্পরের কাছে কর্মের মাধ্যমে স্বচ্ছ থাকলে সর্বস্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি ও মূল্যবোধ জোরালো করার ক্ষেত্রে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই সংসদ সদস্যদের এ লক্ষ্যে জনগণের মাঝে কাজ করে যেতে হবে। সংসদ সদস্যরা জনগণের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় পর্যায়ে এবং সেই সঙ্গে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রের যে তিনটি অঙ্গ (নির্বাহী, বিচার এবং আইনসভা) রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা আবশ্যক।’
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রে জনগণ সর্বময় ক্ষমতার মালিক, আর সংসদ হচ্ছে সেই ক্ষমতার প্রতীক। তাই জাতীয় সংসদকে বলা যায় সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সংবিধান, কার্যপ্রণালী বিধি ও সংসদীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে। সরকারি দল ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তাতে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়।
তিনি বলেন, ‘আসুন, আমাদের মাতৃভূমিকে এমনভাবে গড়ে তুলি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সাল নাগাদ সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী, উচ্চ অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশা করি।’
স্পিকার বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস, আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। পৃথিবীর বুকে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াইয়ের এমন ইতিহাস আর দ্বিতীয়টি নেই। একুশের চেতনা তাই এক অপরিমেয় শক্তি, প্রাণের দীপ্ত জাগরণ।’ এসময় তিনি মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন যার নেতৃত্বে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। সেইসাথে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদের, জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ আর দু’লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
স্পিকার বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমরা ইতোমধ্যে যুগপৎভাবে পালন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। অব্যাহত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, এ মাহেন্দ্রক্ষণকে আরও আনন্দময় করে তুলেছে।’
তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ দেশের যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমতার ভিত্তিতে পেতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ মেট্রোরেল, স্বঅর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রায় যুক্ত করেছে অনন্য মাইলফলক।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল।
সংসদ পরিচালনায় সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে স্পিকার ধন্যবাদ জানান।
এরপর স্পিকার অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
Leave a Reply