নিজস্ব প্রতিবেদক:-
ডাকাত সন্দেহে কুমিল্লায় তিন জনকে গণপিটুনি দিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। অপরজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাত ১১টার পর এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কাজিয়াতল গ্রামের আব্দুস ছালাম নুরু মিয়া (২৮), পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৭)। আহত হয়েছেন- সদর দক্ষিণের কোটবাড়ী বাঘমারা গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে শাহ জাহান (২৮)।
স্থানীয় একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, এর আগে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও গত রাতে উপজেলার কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। এমনকি ডাকাত বলে তাদের চিহ্নিতও করেনি কেউ। শুধুমাত্র সন্দেহ করেই তিন জনকে ধরে গণপিটুনি দেন স্থানীয় জনতা। এতে দুজন মারা যান।
পালাসুতা গ্রামের এক যুবক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বাড়িতে ছিলাম। কয়েকদিনে একই এলাকার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে দুটি। কাজিয়াতল ও পালাসুতা এই দুই গ্রামে।
গত রাতের বর্ণনা দিয়ে ওই যুবক বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান মানুষের এই আতঙ্ক দেখে কিছুদিন ধরেই সাধারণ মানুষকে বলছিলেন, সবাই বাড়ি বাড়ি পাহারা বসাতে। পাহারায় কাউকে সন্দেহ হলে চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে কল দিতে। যেই কথা সেই কাজ। স্থানীয়রাও পাহারা বসান। সবাই সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। প্রথমে শুরু হয় পালাসুতা ঈদগাহমাঠ থেকে। সেখানে ১৫/২০ জন লোককে নাকি দেখেছে, এলাকার কয়েকজন। তারা ডাকাত মনে করে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। আর দৌড়াদৌড়ির একপর্যায়ে গিয়ে নাবু মিয়া নামের এক লোকের বাড়ি থেকে ওই তিন জনকে আটক করেন স্থানীয়রা। সেখানেই রাস্তার ওপর তাদের গণপিটুনি দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ওই রাতে অন্যসব এলাকায় যেভাবে ডাকাত এসেছে বলে প্রচার হয়েছে সেটা আসলে সম্পূর্ণটাই গুজব ছিল। ডাকাতির ঘটনায় গণপিটুনি শুধু পালাসুতা গ্রামেই হয়েছে। যারা মারা গেছে তাদেরকে কেউ চুরি বা ডাকাতি করতেও দেখেননি। এমনকি তাদের কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলেও জানা যায়নি।
ওই গ্রামের আরেক যুবক বলেন, গণপিটুনিতে নিহত নূরু মিয়ার শ্বশুরের নাম নাবু মিয়া। শ্বশুর বাড়িতেই তাকে ও তার সঙ্গে দুজনকে ধরেছেন স্থানীয়রা। তারা ডাকাত না হলে কেন এসেছে এখানে এটাই বুঝি না। তাও এত রাতে।
ধারোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন খন্দকার বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সতর্ক করেছি। পাহারা বসাতে বলেছি। বলেছি, অস্বাভাবিক কিছু হলে যেন আমাদের কল দেয়। স্থানীয়দের পিটুনিতে তারা মারা গেছে। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে।
মুরাদনগর থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনার পর আমরা তাদের হাসপাতালে পাঠাই। সেখানে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করে। আর একজন চিকিৎসাধীন আছে। তাদের পরিচয় পেয়েছি। স্থানীয়রা বলছেন, তারা ডাকাতির অভিযোগে পিটুনি দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসবেন। এ বিষয়ে ওনারা ব্যবস্থা নেবেন।
Leave a Reply