লেখকঃ ওমায়ের আহমেদ শাওনঃ-
তাসফি ভাবছে- ঝাপ দিবে ! চারদিক গাঢ় অন্ধকার। তবুও মনের মধ্যে ভয়-সংকোচ নেই। অথচ লজ্জাবোধ হচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে। সমস্ত শরীরে উঞ্চ শিহরণ নাড়া দিচ্ছে। ভেতরের কলিজা কেঁপে ওঠে-। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। শুকনো ঠোঁটে ঢোক গিলে। কেঁপে ওঠে ওষ্ঠদ্বয়। সে রনির বুকে ঝাপ দিলো।
রনি তার স্বামী। কামনা মেটানোর অধিকার আজ থেকে কেবল রনির। রনি তাসফিকে বক্ষে জড়িয়ে আদিমতার অদমিত আবেগ নিবারণ করে চলে-।
অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে তাসফি ও রনির বিয়ে হয়। অল্প কিছু লোকজন নিয়ে অনুষ্ঠান করে। সিদ্ধান্তটি তাসফির মা’য়ের ছিলো। কারণ, শাওন কোনভাবে জানতে পারলে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে না। একটা সময় তাসফির মা শাওনকে খুব পছন্দ করতো। কিন্তু শাওনের অতিরিক্ত আবেগের কারণে এখন অপছন্দ করে। প্রকৃত ভালোবাসা যে আবেগের মাঝে লুকায়িত থাকে আজকাল মানুষ তা আর বিশ্বাস করেনা।
তাসফি বহুবার বহু ছেলের সাথে মেলামেশা করেছে। কিন্তু অন্য কেউ রনির মতো তার হৃদয়কে নাড়া দিতে পারেনি। তাসফি ও রনি সমস্ত রাত্রি অনিয়ন্ত্রিত সুখের জোয়ারে ভেসে চলে।
বাঙালী মেয়েদের প্রবল ইচ্ছা থাকে- বিয়ের পর সমুদ্র দেখতে যাবে। সমুদ্রের ঢেউ এসে দুজনের মাঝে আছড়ে পড়বে।
বিয়ের আগে সমুদ্র দেখা আর বিয়ের পর সমুদ্র দেখার অনেক তারতম্য আছে।
বিয়ের সপ্তাহ খানেক কেটে গেলে সিদ্ধান্ত স্থির হয়। এদিকে রনির ছুটি শেষ হয়ে এসেছে। তাই তাসফিকে সাথে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যাবে। ওখানে রনি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরী করে।
বৃহস্পতিবার রাত্রে তাসফি ও রনি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কাকতালীয়ভাবে শাওনও সেখানে ভ্রমণ করতে এসেছে।
তাসফির মাথায় হ্যাটক্যাপ। বেশ মানিয়েছে। ইংল্যান্ডের রূপসীদের মতো। রনি তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুজনে তীরের সন্নিকটে। বারবার ঢেউ এসে মিলিয়ে যাচ্ছে। তাসফিকে দেখে শাওনের চোখে জল আসে। সমুদ্রের জলের সাথে তার কষ্টগুলোর অনেক মিল। সমুদ্র জল ধারণ করে, শাওন জল বিসর্জন দেয়।
শাওনের বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে-। চোখের সামনে তাসফির এ পরিণতি শাওনকে অস্থির করে তোলে। মনে মনে ভাবে- যে জীবনে তাসফি নেই সে জীবন রেখে লাভ কী? মানুষ আর কতটা ভালোবাসলে ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা অর্জন করে ! আসলেই প্রকৃত ভালোবাসার কোন বিনিময় পাওয়া যায় না। রনি ও তাসফি সমুদ্রের লহরীতে হৈ-হুল্লোর করে। শাওন অদূরে দাঁড়িয়ে তা অবলোকন করে। ইচ্ছে করছে, প্রচন্ড চীৎকার করে বলতে- ‘তাসফি তোমাকে ছাড়া আমি একা। ফিরে আসো। তোমার বিয়ে হলেও আমি তোমাকে গ্রহন করবো।’ কিন্তু অন্তরের সুপ্ত কথাগুলো প্রকাশের আর স্বমর্থ হয়না।
সন্ধা নামলে তাসফি ও রনি লাবণ্য পয়েন্টের কোন এক হোটেলে চলে যায়।
শাওন সন্ধার পরও সেখানে দাঁড়িয়ে-। তাসফি যে জায়গাটায় সমুদ্রের আনন্দে মেতেছিলো, শাওন সেখানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের জল বুকে জড়িয়ে নিতে থাকে।
আকাশে চাঁদ উঠেছে-। চাঁদের জোৎস্নায় সমুদ্রের জলে তাসফির প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। তাসফির সমুদ্র সৈকতে শাওন নিজেকে মিশিয়ে নেয়।
।। সমাপ্ত ।।
Leave a Reply